গো-খামারে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে কেজি সাড়ে ৩ শত টাকা

মানিকছড়িতে কোরবান’কে ঘিরে মোটাতাজা গরু বাজারজাতে চিন্তিত খামারীরা

fec-image

করোনা’ প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ফলে আসন্ন কোরবানকে ঘিরে মানিকছড়ি উপজেলার ছোট-বড় অর্ধশত গো-খামার ও কৃষকের ঘরে মোটাতাজা করা কয়েক হাজার দেশী-বিদেশী জাতের গরু নিয়ে চিন্তিত গো-খামারীরা।

লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে প্রতি কেজি সাড়ে ৩শত টাকায় গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে গো-খামারীরা।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও গো-খামার মালিক সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় গো-খামার রয়েছে ৩৯টি। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোরবানে বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে সহস্রাধিক দেশী-বিদেশী গরু মোটাতাজা করা হয়।

এছাড়া উপজেলার গ্রামে-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে কয়েক হাজার দেশী বলদ,ষাড় মোটাতাজা করে থাকে। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে কৃষকের ছোট-মাঝারী গরু উঠালেও ক্রেতা শুণ্য বাজার! ফলে খামারে মোটাতাজা করা গরু নিয়ে চিন্তিত গো-খামারীরা।

করোনা’ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি ভেঙ্গে কোরবানির বাজার জমে উঠার সম্ভাবনা যেমন ক্ষীণ। অন্যদিকে অনুন্নত জনপদে ‘অনলাইন বাজার ’প্রত্যাশাও কঠিন।

ফলে মানিকছড়ি’র গো-খামারীরা মোটাতাজা করা গরু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ে প্রাকৃতিক সবুজ ঘাসে লালিত-পালিত দেশী-বিদেশী গরু কোরবানে চাহিদা থাকায় এ গো-খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন সাধারণ কৃষক ও গো-খামারীরা।

গো-খামারে এবং গ্রামের পালিত গরুর নিয়মিত খাবারের তালিকায় প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল এবং খেড়। এসব খাবার সু-স্বাদু হওয়ার কারণে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজায় পরিপুষ্ট হয়। ফলে এসব গরু কোরবানে বেশ চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা।

বিগত সময়ে কোরবানকে ঘিরে এখানকার হাট-বাজার,গ্রামে-গঞ্জে পাইকারদের আনা-গোনায় মূখরিত হয়ে উঠে কোরবানের বেচা-কেনা। আর এ বছর ‘করোনা’ আতংকে এখনো পর্যন্ত জনপদের কোথাও কোরবানের গরুর খোঁজে কেউই আসেনি।

হাট-বাজারগুলোতে দেশী গরু বিক্রির উদ্দেশ্যে উঠানো হলেও ক্রেতা শূণ্য বাজার দেখে দুঃচিন্তায় পড়েছে গো-খামারীরা।

উপজেলার ডাইনছড়ি গরু ব্যবসায়ী আনু মিয়া বলেন, প্রতি বছর কোরবানির বাজারে দেশী গরুর চাহিদা অতুলনীয়। কোরবানের এক দেড় মাস আগ থেকেই শহরের ব্যবসায়ীরা গরুর খোঁজে বাড়ি বাড়ি আসতে শুরু করেন। যার ফলে এখানকার ঘরে ঘরে কম-বেশি দেশী বলদ, ষাঁড় দেশী পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়।

অনেকে আবার এ খাতে ২০/৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গরু বর্গা দিয়ে রাখেন।

এক সত্যাপাড়া মো. আবুল কালাম ও আবদুল মালেক বলেন, আমরা নিজ বাড়ীতে দেশীয় পদ্ধতিতে যৎসামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫/৭টি দেশীয় বলদ, ষাঁড় লালন-পালন করে কোরবানে বিক্রি করে থাকি। এ বছর ‘করোনা’র ছোবলে দূর্বিসহ জনজীবনে কোরবানের আনন্দে ভাটা পড়ার আশংকা রয়েছে! ফলে এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।

উপজেলার ‘এ.কে এগ্রো ডেইরী’ ফার্মের মালিক ও উপজেলা ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবার উপজেলার ছোট,মাঝারী ও বড় ৩৯ খামারের পাশাপাশি কৃষকের ঘরে মোটাতাজা দেশীয় পদ্ধতিতে সু-স্বাদু খাবারে পালিত গরু বাজারজাত করা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি।

কৃষকের ছোট ও মাঝারী গরু অনায়াসে বাজারে উঠানো গেলেও গো-খামারের ৫শ-৮শ কেজি ওজনের গরু বাজারে উঠানো খুবই কষ্টকর। যার ফলে লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে আমরা বড় গরুগুলো বিক্রি করে থাকি। এতে কেজি সাড়ে ৩শত টাকা দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আমরা ফার্মে মাঝারী ও বড় ১৫/২০টি জাতীয় গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। উপজেলার গো-খামারগুলোতে প্রায় ৫শতাধিক কোরবানির গরু বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ৩৯টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি অসংখ্য কৃষক কোরবানকে ঘিরে সু-স্বাদু খাবার ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরুগুলোতে মোটাতাজা করছে। সময়ে-অসময়ে খামারী ও কৃষকরা আমাদের (চিকিৎসক) পরামর্শ নিয়ে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, কোরবানি, মানিকছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন