মানিকছড়িতে প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে তোলপার

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ নিয়ে জেলা জুড়ে তোলপার চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো. আহসান উদ্দীন মুরাদ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মধ্যে এখন চলছে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে  রয়েছে, হামলার চেষ্টা, প্রাইভেট কার ভাংচুর, হুমকি প্রদানের মতো অসাদচরণের গুরুতর অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার এমন কি আইজিপি দপ্তর পর্যন্ত গড়িয়েছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটিও।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি বিদেশীদের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলার প্রবেশমুখ মানিকছড়িতে জেলা পরিষদের সহযোগিতায় পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে ফরেনার্স চেক পোস্ট বসানো হয়। কিন্তু মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো. আহসান উদ্দীন মুরাদ ঐ ফরেনার্স চেক পোস্টে তালা ঝুলিয়ে দিলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মো. আহসান উদ্দীন মুরাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে তার উপর হামলা চেষ্টা, হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসককে পত্র দেন।

তবে মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উপজেলার নয়াবাজার এলাকায় বিদেশি পর্যটকদের চেক পোস্টের অফিসের চাবি আনতে গিয়েছিলাম। ইউএনও স্যার চাবি দেননি। এর থেকে আর বেশি কিছু হয়নি।

অপর দিকে ফরেনার্স চেক পোস্টের চাবি আটকে রাখার বিষয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতার দাপট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ঐ চেক পোস্টে একজন কেয়ার টেকার রয়েছে। কারো প্রয়োজন হলে সে খুলে দেবে।

কিন্ত পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এটি পুলিশের চেক পোস্ট। এ চেক পোস্টের চাবি উপজেলা প্রশাসনের কেয়ার টেকারের কাছে থাকবে কেন।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা তদন্তে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত  কমিটি গঠন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ দিকে মানিকছড়ি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে  আরিফুল ইসলাম মামুন নামে এক ব্যবসায়ী তার প্রাইভেট কার ভাংচুর ও ড্রাইভারকে মারধরের অভিযোগ করেছেন।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগে ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম মামুন বলেন, গত ১০ জানুয়ারি প্রাইভেট কারের চালক জসিম উদ্দিন খাগড়াছড়িতে যাত্রী নামিয়ে রাত ১টার দিকে মানিকছড়ি পৌঁছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে মানিকছড়ি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. তৌফিকুল ইসলাম আচকা এসে প্রাইভেট কার ভাংচুর শুরু করে। এক পর্যায়ে প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে মারধর করে আটকে রাখে।

মানিকছড়ি থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে মানিকছড়ি থানায় জিডি হয়েছে।

পক্ষান্তরে মানিকছড়ি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. তৌফিকুল ইসলাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে তার পিস্তল কেড়ে নেওয়া এবং তেড়ে মারতে যাওয়ার অভিযোগও করেছে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বরাবর এক আবেদন।

মানিকছড়ি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ তৌফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ জানুয়ারি সার্কেলের একটি অনুষ্ঠান শেষ করার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। উপজেলা হাসপাতালে ভর্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তাকে এক সপ্তাহের বিশ্রাম দেন। একটু সুস্থ অনুভবের পর ১২ জানুয়ারি তার দেহরক্ষী আবু জাফর জানান, অস্ত্র ও ওয়্যারলেস মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। এ খবর পেয়ে তিনি দ্রুত মানিকছড়ি থানায় চলে যান। থানায় গেলে ওসি মাঈন উদ্দিন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং তাকে মারতে উদ্যত হন। এ সময় দায়িত্বরত কয়েকজন উপপরিদর্শক (এসআই) তাকে উদ্ধার করেন।

তবে ওসি মাঈন উদ্দিন এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানিকছড়ি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলামের কোনো অস্ত্র নেই। বডিগার্ড থাকে। বডিগার্ড অস্ত্র বহন করেন। ‘স্যার হাসপাতালে থাকায় আমি বডিগার্ডের অস্ত্র ও ওয়্যারলেস জেলা পুলিশ লাইনে পাঠিয়েছি।

মানিকছড়ি সার্কেলের সিনিয়র এএসপি তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন