মানিকছড়িতে মিশ্র ফলদ বাগানে বারোমাসি আমের ফুল-ফলে সমাহার

fec-image

সবুজ বনাঞ্চলের নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরা খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বারোমাসি থাই কাটিমন আম চাষ ও বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ায় মিশ্র ফলদ বাগানের কদর বেড়েছে। এছাড়া ক্যাকটাস জাতীয় বৃক্ষে সুস্বাদু ড্রাগন ফল, মিষ্টান্ন মালটা আর থাই পেয়ারা সৃজনে ‘সুখী এগ্রো পার্ক’ চলতি মৌসুমে আম ও ড্রাগন বাণিজ্যিকভাবে বেচাকেনায় সাফল্যতা অর্জন করেছে । তাকে অনুসরণ করে কাটিমন আম চাষে ঝুঁকছে মানুষ।

উপজেলার ২২৪ নম্বর কুমারী মৌজার বড়টিলাস্থ এলাকায় টিলা ভূমির ২০ একর জায়গাজুড়ে ২০০৭ সালে কুমারীর সৌখিন ব্যক্তি মো. এনামুল হক নিজস্ব ও ক্রয়কৃত ভূমিতে পরিকল্পিত বাগান ও কর্মজ্ঞ প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষে পাহাড়ের ঢালুতে প্রথমে ১০০০ মিষ্টান্ন মাল্টার চারা সৃজন করেন। এর পর ২০১৬-১৭ সালে ১০০০ বারোমাসি থাই কাটিমন আমের চারা ও ২০২০-২০২১ সালে ৪০০০ হাজার পিলারে ১৬০০০ সুস্বাদু ড্রাগন লাগিয়ে বিশাল মিশ্র ফলজ বাগান গড়ে তোলেন। প্রথমে বারোমাসি আম চাষ দেখে মানুষজন তাকে পাগল বলে তিরস্কার করলেও এখন আমের বাণিজ্যিক চাহিদা দেখে অনেক মিশ্র ফলদ বাগান মালিকেরা কাটিমন আম চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে।

‘সুখী এগ্রো পার্ক’র মালিক মো. এনামুল হক জানান, ১০ একর পৈতৃক টিলা ভূমির আশেপাশে আরও ১০ একর ভূমি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে মিশ্র ফলদ বাগান সৃজনের স্বপ্ন নিয়ে ‘সুখী এগ্রো পার্কের যাত্রা শুরু করি। বন-জঙ্গল পরিস্কার, ঘেরা-ভেড়া নিশ্চিত করে টিলার ঢালুতে ২০১৬-১৭ সালে প্রথমে বারোমাসি থাই কাটিমন আমের ১০০০ চারা। এর পর ১০০০ গর্তে মিষ্টান্ন মাল্টার চারা ও উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে লাগাই(সৃজন) থাই পেয়ারা। ২০২০-২১ সালে ৪০০০ পিলারে ১৬০০০ ড্রাগন ফলের চারা সৃজন করি। আর সমতল জায়গা খালি রাখা হয় ডেইরী, পোল্ট্রি প্রকল্পের জন্য।

পাহাড়ে মিশ্র ফলদ বাগান সৃজনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে মো. এনামুল হক আরও বলেন, বারোমাসি থাই কাটিমন আম গাছে সারা বছর একই ডালে ফুল ও ফলে ভরপুর থাকে। একই গাছে ফুল ও ফল ঝুলে থাকতে দেখে যে কারও মনছুঁয়ে যায়। বারােমাসি আমের গাছ লাগানোর সময় এখানকার লোকজন একই গাছে সারা বছর ফল ধরার কথা শোনে এটিকে আজগুবী কথা বলে আমাকে পাগল ডাকত, তিরস্কার করত অনেকে। আর এখন আমের পুল মৌসুমে থাই কাটিমন আমের কেজি দেড়শত টাকা আর অফ মৌসুমে কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি হয় দেখে মানুষজন অবাক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকেন। আমার মিশ্র ফলদ বাগানে কাটিমন আম ও ড্রাগন চাষ অনেকের কাছে এখন অনুকরণীয়। কাটিমন আম চাষে মানুষজন উদ্ধুদ্ধ হওয়ায় ২০০০০ চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছি।

প্রথম বছর (চলতি মৌসুমে) ভরা মৌসুমে আম বিক্রি করেছি ৭ মে.টন আর ড্রাগন ফল বাজারজাত করেছি ১০ মে.টন। পাইকারি ছোট সাইজ ২৫০ টাকা বড় সাইজ ৩০০ টাকা কেজিতে ক্যাকটাস জাতীয় সুস্বাদু ড্রাগন চট্টগ্রামে ক্লাবে সরবরাহ করা হয়। খাগড়াছড়ি জেলায় এত বড় পরিসরে ড্রাগন বাগান এবং থাই কাটিমন আম এখনো কেউ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনতে পারেনি।

আগামীতে মাচাং পদ্ধতিতে আরও ব্যাপক হারে ড্রাগন চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। পাহাড়ের ঢালুতে পানি জমে না। এছাড়া পাহাড়ের মাটি ও বায়ু ড্রাগন চাষ উপযোগী। ফলে আমার ‘সুখী এগ্রো পার্ক’ ঘিরে বাণিজ্যিক ফলদ বাগান হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রথম। থাই কাটিমন আমের ফলন ও ৪০০০ পিলার নিয়ে গড়ে তোলা ফলদ বাগান থেকে টনে টনে কাটিমন আম ও ড্রাগন( আমি ছাড়া) কেউ বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারেনি।

ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ বলেন, পাহাড়ের মাটি আসলেই খাঁটি। এখানে সাহসী ও উদ্যোগী যে কেউ পরিকল্পিত বাগান সৃজনে সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাটিমন আম ও ড্রাগনের বাজার চাহিদা দেখে অনেক বাগান মালিক মিশ্র ফলদ বাগানে পুঁজি বিনিয়োগে ঝুঁকছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘সুখী এগ্রো পার্ক’র মালিক এনামুল হক পরিকল্পিত পরিকল্পনায় মিশ্র ফলদ বাগানে সৃজনে চমক দেখিয়েছেন। যা অনেকের কাছে এখন অনুকরণীয়। এই সৌখিন ব্যক্তি একজন প্রকৃতি-প্রেমি ও সৌখিন কৃষক। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা এ ধরণের উদ্যোমী, পরিশ্রমি ব্যক্তিদের পাশে থেকে ‘বিষমুক্ত’ ফল উৎপাদনে কাজ করছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন