parbattanews

মানিকছড়ির সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস দ্রুত কমছে

৭ মাসেই ৬ নং কূপের গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার আশংকা!

003

মো. ইমরান হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি):

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডের ৫ ও ৬নং কুপের গ্যাস দ্রুত কমে আসছে। ফলে নতুন কূপ খনন না হলে বেশি দিন এগুবে না গ্যাসক্ষেত্রটির কার্যক্রম! বর্তমানে গড়ে দু’কূপ থেকে (দৈনিক ) ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যাচ্ছে জাতীয় গ্রীডে। ৬নং কূপ উদ্ধোধনের ৭ মাস যেতে না যেতেই গ্যাসের গতি এসে দাঁড়িয়েছে ৪.৫০ এর স্থলে ২.২০ মিলিয়ন ঘনফুটে! ফলে নতুন কূপ খননের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।

সরজমিন সেমুতাং ঘুরে জানা গেছে, মানিকছড়ির এ সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রটির ইতিহাস অনেক পুরানো এবং দেশ-বিদেশে পরিচিত। পার্বত্য খাগড়াছড়ি ও চট্রগ্রামের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঐতিহ্যবাহী মংরাজার আবাসস্থল মানিকছড়ি উপজেলার কালাপানি মৌজার ২১ একর ভূমির উপর ১৯৬৩ ইং সনে ব্রিটিশ কোম্পানির একটি অনুসন্ধানী দল এই গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার করে। ৫টি কুপের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে র্দীঘ ১বছর ধরে গ্যাস ও তেল উত্তোলন করে। এতে প্রচুর পরিমান তেল ও গ্যাসের মজুতের সন্ধান পাওয়ায় এই গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে বিশ্বব্যাপি আলোচনার সৃষ্টি হয়।

কিন্তু পাশ্ববর্তী ভারতের ১টি কুপের সাথে সংযোগ থাকায় এবং সেখান থেকে আগেই এ গ্যাস উত্তোলনের ফলে পাশ্ববর্তী গ্যাসক্ষেত্র গ্যাসের সংকট পড়ে যায়। এরপর হতেই এ গ্যাস ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিলে। যদি ও এ নিয়ে তথ্যভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। এক পর্যায়ে ২নং কুপে সন্ত্রাসীরা বোমা মেরে রিগ মেশিনসহ ওয়েল হেডটি সস্পুর্ণরূপে ভূ-গর্ভে তলিয়ে দেয়। আজও সেই কুপ থেকে অঝোরে বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে আসছে। দর্শনার্থীরা দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার এলাকার পাহাড় ,জমি, পানিতে, গ্যাসের বুদ বুদ দৃশ্য দেখে অবাক হচ্ছে! অনেকে আবার তাতে আগুন ধরিয়ে উল্লাস করছে।

‘৭০এর দশকে আবার কার্যক্রম শুরু হলে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১যুগ পর ১৯৮৩ সালে পূনরায় পেট্রোবাংলা “সেমুতং” চালু করলেও হঠাৎ দুজন প্রকৌশলীকে অপহরণ করে হেডম্যান পাড়ায় লাশগুম করে তৎকালীন শান্তিবাহিনী। ফলে এক পর্যায়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অপহরণকৃত প্রকৌশলীদের রেখে যাওয়া জরিপে গ্যাসক্ষেত্রের ৫নং কুপে হিরা, গন্ধ্রক পাওয়ার প্রচুর সম্ভবনা ছিল বলে এলাকাবাসীরা তখন দাবী করেছিলেন। যার কারণেই তাদেরকে জীবন দিতে হয়েছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। তবে আজ পর্যন্ত ওই হত্যাকান্ডের কোন তদন্ত হয়নি।

পরবর্তীতে ১৯৯৪, ১৯৯৭, ২০০০, ২০০৪ সালে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তি ও গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বার বার উত্তোলন ব্যর্থ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্যাসক্ষেত্রটি অভিবাকহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে গ্যাসক্ষেত্রের ব্যারাকে রক্ষিত কেয়ার্ন এনার্জি কোম্পানির উন্নত মানের মালামাল ও জেনারেটর সহ বিভিন্ন লোহার যন্ত্রাংশগুলো পাহারাদারা কালো বাজারে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সর্বশেষ আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সালে একনেক সভার সিদ্ধান্তানুয়ায়ী বাপেক্স ২০১১ সালে ৫ নং কুপ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে র্দীঘ ৬৫কি.মিটার দূরে চট্রগ্রাম শহরের জাতীয় গ্রীডে এ গ্যাস সংযোগ চালু করে। শুরুতে গ্যাসের গতি ১৫-১৭ মিলিয়ন ঘনফুট থাকলেও পরবর্তীতে তা নিন্ম পর্যায়ে নেমে আসে। এতে বাপেক্স চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরে বাপেক্স পুরাতন (দেবে যাওয়া) ১নং কুপের পাশে পাহাড় বেষ্টিত ৬নং কুপ খনন শুরু করে রাশিয়ান কোম্পানী গেজপ্রম’র সহযোগি প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশী) ড. হাসান মাহমুদ চৌধুরীর পরিচালনাধীন কে.এন।

১৯ জানুয়ারী-২০১৪ খ্রি. থেকে খনন কাজ পুরোদমে শুরু করে ফেব্ররুয়ারী মাসে তা শেষ হয়। এর পর ৫ নং (চলমান) কূপ থেকে ৬নং পর্যন্ত পাইপ লাইন সংযোগ শেষে গত ১২ মার্চ অগ্নি প্রজ্জলনের মাধ্যমে তা পরীক্ষামুলক সম্প্রচার শুরু করে ১১ এপ্রিল থেকে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয় । ওইদিন গ্যাসের গতি ৪.৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থাকলেও বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২.২০ মিলিয়ন ঘনফুটে এবং ৫নং কুপে বর্তমানে গ্যাস উঠছে ৪.৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

এতে দেখা যাচ্ছে খুব দ্রুত এ গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। অচিরেই যদি নতুন কূপ খনন না হয় তাহলে এ ঐতিহ্যবাহী গ্যাস ক্ষেত্রটি যে কোন সময় নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। তাই নতুন কূপ খননের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। তাছাড়া এই গ্যাস ক্ষেত্রে গ্যাসের সাথে তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের প্রাপ্যতার যে সম্ভাবনার কথা অতীতের বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা গিয়েছিল তারও অনুসন্ধান চায় এলকাবাসী।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও যোগ্যাছোলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, যেহেতু গ্যাসক্ষেত্রটি খুবই পুরাতন এবং বাপেক্স অনেক টাকা ব্যয় করে এ গ্যাস জাতীয় গ্রীডে দিয়েছে তাই নতুন কূপ খনন সাপেক্ষে এ গ্যাসক্ষেত্রটি চালু রাখা প্রয়োজন।

গ্যাস ফিল্ডের ইনচার্জ মো. মাহাবুবুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে জানান ৫নং কূপে ৪.৯৫ এবং ৬নং কূপে ২.২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা না থাকলেও পরবর্তীতে এ গ্যাস ক্ষেত্রে আরো কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।

 

Exit mobile version