parbattanews

মানিকছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘সহায়ক’ বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে শিক্ষকরা

মানিকছড়ি প্রতিনিধি:

মানিকছড়ি উপজেলার একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকরা সহায়ক বই বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার পাঠ্য ঘোষণা করেন এবং তা ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীরা তা কিনতে ব্যর্থ হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করার মত ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একমাত্র রাণী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জাল হোসেন ১-৫ এপ্রিল ছুটি থাকা অবস্থায় বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষকের যোগসাজসে এবং মোটা অংকের কমিশন নিয়ে ৬ষ্ঠ-নবম শ্রেণির তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বই কিনতে বাধ্য করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে।

শিক্ষকদের আল্টিমেটাম মেনে ইতোমধ্যে ৯০% শিক্ষার্থী নিন্মমানের বই কিনলেও অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা বই সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ায় বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জনৈক মেধাবী ছাত্র জানায়, আমাদের নাঈম স্যার ও লতিফ স্যার রুমে গিয়ে সহায়ক বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার বইয়ের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা কিনতে চাপ প্রয়োগ করে। আমি যথা সময়ে কিনতে না পারায় আমার দু’হাতে স্যারেরা বেত্রাঘাত করেছে।

হাফছড়ি থেকে আসা এক অভিভাবক জানায়, বইয়ের জন্য ছেলের পিড়াপিড়িতে শাক-সবজি ও মোরগ বিক্রি করে বই কিনে দিয়েছি। এখন বাড়ি যাওয়ার গাড়িভাড়া টুকুও নেই। অভিভাবক ও দোকানপাটে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহায়ক বই পাঠ্য নিয়ে তোড়জোরের খবর পেয়ে রবিবার বিকালে স্কুলে গিয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ১-৫ এপ্রিল ছুটিতে ছিলাম।

এ সুযোগে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. নাঈমুল হক ও আবদুল লতিফ দু’জনে নিজ আগ্রহে সহায়ক বই কিনতে শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করেছে। যা আইনসিদ্ধ নয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি বিষয়টি আমলে নিয়ে ৬ এপ্রিল ওই অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথে নিয়ে রুমে রুমে গিয়ে সেই বেআইনি আদেশ প্রত্যাহারসহ সকল বই ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। ইতোমধ্যে ৫০-৬০% বই ফেরত আসতে শুরু করেছে। বিষয়টি সর্ম্পকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

এদিকে একাধিক অভিভাবকরা জানান, এ বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ানো শিক্ষক মো. নাঈমুল হক একজন বিতর্কিত শিক্ষক। বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার প্র্যাকটিক্যালে নম্বর কম দেয়া, বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়ণ না করে নম্বর বন্টন,৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতিসহ অসংখ্য অভিযোগ  থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। ফলে সে বহাল তবিয়তে থেকে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে তাল-বাহানা করছে।

অফিসে ফেরত আসা বই যাচাই করে দেখা গেছে, সবগুলো অক্ষর প্রকাশনার বই। লাইব্রেরিতে বইয়ের মূল্য সর্ম্পকে জানতে গিয়ে দেখা গেছে, ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার কিনতে প্রতি শিক্ষার্থীকে গুণতে হচ্ছে ৫৯৫ টাকা। ৭ম শ্রেণিতে ৬২০ টাকা, ৮ম শ্রেণিতে ৭৫০ টাকা এবং ৯ম শ্রেণিতে ৯২৫ টাকা।

Exit mobile version