মামলাজটে আটকে গেছে মাটিরাঙ্গার ৭ গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে মাটিরাঙ্গার ১৭টি অ-উপজাতি গুচ্ছগ্রামের রেশনের বরাদ্দ দেয়া হলেও সাবেক প্রকল্প চেয়ারম্যানদের হাইকোর্টে দায়ের করা রীটের কারণে আটকে গেছে মাটিরাঙ্গার ৭ গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ কার্যক্রম। ফলে বকেয়া রেশন না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে ৭টি গুচ্ছগ্রামের ২ হাজার ৪শ’ ৪ জন কার্ডধারী পরিবার। দীর্ঘদিন রেশন না পাওয়ায় খাদ্যাভাবে ঐ গুচ্ছগ্রামের রেশন কার্ডধারী প্রতিটি পরিবারে নেমে এসেছে চরম খাদ্য সঙ্কট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুচ্ছগ্রামগুলোর প্রকল্প চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে সাবেক প্রকল্প চেয়ারম্যানদের দায়ের করার রীটের কারণেই মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ের নোয়াপাড়া গুচ্ছগ্রাম, সাহেব সর্দারপাড়া গুচ্ছগ্রাম, তবলছড়ির বড়বিল গুচ্ছগ্রাম, গুইমারার গুইমারা মুসলিমপাড়া-২ গুচ্ছগ্রাম, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মাটিরাঙ্গা নিশা-২ গুচ্ছগ্রাম, ধলিয়া গুচ্ছগ্রাম ও আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ স্থগিত রয়েছে।
কতিপয় সুবিধাবাদী আর অতিলোভী জনপ্রতিনিধির স্বার্থের বলি হচ্ছে স্থানীয় নিরীহ জনগণ এমন অভিযোগ করেছেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান মো: মোস্তফা। তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যক্তির কাছে জিম্মি হয়ে আছে উপজেলার দুই হাজারেরও বেশী কার্ডধারী পরিবারের প্রায় বিশ হাজার সাধারণ মানুষ। তাদের মিথ্যা রীটের অজুহাতের দীর্ঘদিন রেশন বিতরণ বন্ধ থাকায় মানুষ খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করছে তারা। শুধু তাই নয়, অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ারও উপক্রম দেখা দিয়েছে। অথচ এ বিষয়ে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ডধারী মো: আবদুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে উদ্বুদ্ধ এই জটিলতা সৃষ্টির জন্য ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের সাবেক প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: নুরুল ইসলাম-কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র তার ব্যক্তিস্বার্থের কারণেই গুচ্ছগ্রামের সাধারণ মানুষ কষ্ট করছে।
মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক মো: নুরুল ইসলাম কাউন্সিলরকে একজন দুর্নীতিবাজ দাবি করে ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের মো: আবদুল মালেক ও মো: নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সে ইতিমধ্যে রেশন বিতরণের অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করা ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদ, মক্তব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত করেছে।
সম্প্রতি ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের কয়েকশ’ কার্ডধারী মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাত করে তাদের বকেয়া রেশন দাবি করে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের সাবেক প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: নুরুল ইসলাম ইতিমধ্যে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ঢাকায় গেলেও গত দুইদিন ধরে তার ফোন বন্ধ রয়েছে। একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে এবিষয়ে কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারীরা দাবি করেছেন, জনরোষের ভয়ে গুচ্ছগ্রামের সাবেক প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: নুরুল ইসলাম আত্মগোপন করেছেন।
কবে নাগাদ এসব গুচ্ছগ্রামের স্থগিত রেশন বিতরণ হবে এবিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল জানান, যেহেতু উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে সেহেতু ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণের বিষয়ে আমি কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা। তবে উচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবে আমি তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করবো। প্রয়োজনে আমি নিজে উপস্থিত থেকে রেশন বিতরণ করবো।