Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে এখনো বন্দি ২০ হাজার বাংলাদেশি

Coxs Maloshia-Thailand copy
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার:
অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রা। পথিমধ্যে থাইল্যান্ডে জঙ্গলে আটকা পড়া। এরপর টাকার জন্য বন্দি রেখে নির্মম নির্যাতন। পরিশেষে গণকবরে লাশের স্তুপ। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে এমন খবরে কক্সবাজারের গ্রামে গ্রামে চলছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। যারা সাগর পথে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন-তাদের স্বজনরা এখন শোকে দিশেহারা। এসব খবর সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ফলে গা ঢাকা দিয়েছে চিহ্নিত দালালরা।

এদিকে দালালদের ধরতে ও থাইল্যান্ডে আটকা পড়া যাত্রীদের উদ্ধারের ব্যাপারে কাজ করছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বুধবারও পাঁচ দালালকে আটক ও ৪ মালয়েশিয়াগামীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়ার উদ্যেশ্যে ঘর ছেড়েছেন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়ার আবদুস শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ হারুন, আবদুর রহিমের ছেলে আবছার উদ্দিন, শামসুল আলমের ছেলে সরওয়ার, নুরুল আলমের ছেলে আবদুর রহিম, আবদুস সবুরের ছেলে আজিজুল হক, নুর আহমদের ছেলে মীর কাসেম, আবু তালেবের ছেলে মোহাম্মদ রফিক, কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আনিছ, একই ইউনিয়নের উনচিপ্রাংয়ের আবদুর রহমানের ছেলে শাহ আলম, রইক্যং-এর কালা মিয়ার ছেলে আবু ছিদ্দিক ও আমির হামজার ছেলে আবদুল করিম, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মোহাম্মদ বশিরের ছেলে ফুতু ও শফিকুর রহমানের ছেলে এবাদুল্লাহ। এদের কোন খবর নেই। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেকের বিল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাদশাহ মিয়ার ছেলে আবদুল জব্বার ও আবুল বশরের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম। যাদের হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়ার পানির কুপ এলাকার আবু ছিদ্দিকের পুত্র রমজান আলী (২৭), আবদুল হাকিমের পুত্র আবদুর রহমান (৩০) ও সুলতান আহমদের পুত্র আবদুর রহিম (২৮)।

ওই তিন যুবকের পরিবার জানান, আজ থেকে আড়াই বছর আগে তারা মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। শামশু মাঝি নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে তারা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে পরিবারের কাছে ফোন করে বলেছিল, ‘আমরা মালয়েশিয়ার ট্রলারে উঠলাম’। তারপর থেকে অদ্যবধি কোন কথা হয়নি।

ভুক্তভোগী পরিবারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা সাগরপথে মালয়েশিয়া গেছেন। তাদের সব কটা পরিবারই নিম্নআয়ের। অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। কেউ আবার এক মায়ের এক সন্তান।

অভিভাবকরা জানান, একজনকে মালয়েশিয়া নিতে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রথমে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করবে। পরে তারা মালয়েশিয়া পৌঁছলে ওই দালালদেরকে বাকি টাকা পরিশোধ করবে তাদের অভিভাবকরা। তবে সমুদ্র পথে নয়, তাদের বিমানে করে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে টাকা নেয় দালালরা।

অপরদিকে রামু উপজেলার দারিয়ারদিঘী গ্রামের আবদুস শুক্কুরের ১৫ বছরের সন্তান হারুনুর রশিদ নিখোঁজ রয়েছে গত আড়াই বছরের বেশি সময়। স্থানীয় তনু নামে এক ব্যক্তি কৌশলে তার শিশুকে নিয়ে গিয়ে টেকনাফ থেকে তুলে দেয় মালয়েশিয়া ট্রলারে। এরপর থেকে নিখোঁজ থাকা পুত্রের শোকে অনেকটা পাগল পিতা ও মা। হারুন ছাড়াও অনন্ত ২০ জন শিশুকে একই ভাবে নিয়ে যায় এ দালাল। এ নিয়ে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হলে তনুও পরে মালয়েশিয়া পালিয়ে গেছে।

স্থানীয়দের মতে, ওই এলাকায় নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছে ওই এলাকার গোলাম সোবাহানের পুত্র কালু, গোলাম হোসের পুত্র ফরিদুল আলম, সোনা আলীর পুত্র ফরিদ মিয়া, নাজির হোসেনের পুত্র ফরিদুল আলম, কাদের হোসেনের পুত্র মো, আলম, সুলতান আহমদের পুত্র তৈয়ুব উল্লাহ, আলী আহমদের পুত্র আলম, ইসলাম মিয়ার পুত্র মুহিব উল্লাহ, আলী আকবরের পুত্র আবু সিদ্দিক, ঠান্ডা মিয়ার পুত্র কামাল হোসেন, আবুল কালামের পুত্র খাইরুল আমিন। আর এরা সকলের বয়স ১২ থেকে ১৮ এর মধ্যে।

নিখোঁজদের স্বজনদের দাবী, স্থানীয় দালাল মৃত মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র জসীম, মৃত নজির আহমদের পুত্র মুফিজ, মহেশখালীর বাসিন্দা শের আলী, কাদের হোসেনের পুত্র তনু, আবদুস সালামের পুত্র আবদুর রহিম এর নেতৃত্বে এসব শিশুদের পাচার করা হয়েছে।

তারপরও সক্রিয় পাচারকারী সিন্ডিকেট :
স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় যাত্রা। উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে নিজের জীবনকে এক অনিশ্চয়তার হাতে তুলে দিয়ে এভাবেই অবৈধভাবে সাগর পথে পাড়ি জমাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আর এসব মানব পাচারের কাজে জড়িত মূল হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া, স্থানীয় প্রভাব আর পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর চলছে সাগর পথে মানবপাচার। টেকনাফ-উখিয়া রুটে মানবপাচারে জড়িত রয়েছে প্রায় একশ’ সিন্ডিকেট। পুলিশ প্রশাসনও হন্য হয়ে খুঁজছে এসব দালালদের। টেকনাফ থানায় দায়ের করা পুলিশের ১৫ মামলার এজাহার থেকে এসব সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দালালদের মধ্যে রয়েছে টেকনাফের হোয়াইক্যং উনছিপ্রাং এলাকার হোছন আহমদ, ওরফে বাংলা হোছন, এনায়েত উল্লাহ, শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার মো. সেলিম ওরফে লম্বা সেলিম, মো: আয়াছ, শামীম, মো ইসলাম, মো. মুজিবুর রহমান, রহমত উল্লাহ, মো. শরীফ, নুর মোহাম্মদ, ধলু হোসেন, কালু মিয়া, আবদুর রহমান, আয়ুব আলী মাঝি, আবুল কালাম, মো. ফিরোজ, ইউনুছ, নয়াপাড়ার কসাই মুজিদ, লাল মিয়া সাবরাং ক্যাটিন, টেকনাফের মো. ইসমাইল, মো. হোসেন মৌলভী, মো. রফিক, কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ১নং শেডের মো. রফিক, মো. উলাহ, মো. আমিন ও মাহাবুব আলম মিয়ানমারের আকিয়াবের আবদুর রহিম। ওরা একেকজন একেকটা সিন্ডিকেট।

কক্সবাজারের মানবপাচারী বিরোধী সংগঠন হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, আমাদের পাওয়া তথ্য মতে, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে ৭/৮ হাজার, থাইল্যান্ডে অন্তত ৮ হাজার ও মিয়ানমারের প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন। এপর্যন্ত শতাধিক মানুষকে উদ্ধারের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।

তিনি আরও জানান, গত তিন বছরের অন্তত তিন হাজারের অধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। এপর্যন্ত আমরা আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ উদ্ধার করেছি।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা আসিফ মুনির জানান, গণকবরের বিষয়টি উদ্বেগজনক। ইতোমধ্যে গণকবর থেকে ১০ বাংলাদেশি উদ্ধার করা হয়েছে। ওইসব গণকবরে আরও বাংলাদেশি থাকতে পারে। থাইল্যান্ডে গভীর যেসব যাত্রী বন্দি রয়েছেন তাদেরকে উদ্ধারে আমরা মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করছি।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মতিউল ইসলাম ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার জানান, ইতোমধ্যে আমরা দালালদের আটক অভিযান শুরু করেছি। জেলাব্যাপী এ অভিযান চলবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানান, বুধবার সকালে পৃথক অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার শহরের দরিয়ানগর ও টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ থেকে ৫ দালালকে আটক করা হয়েছে।

টেকনাফস্থ ৪২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানো থেকে লোকজনদের রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও রাজনৈতিক লোকজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় মানবপাচার প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন