মায়ানমারের জেনারেলের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা-নির্যাতন-হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ এনে মায়ানমারের প্রভাবশালী জেনারেল মং মং সোয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য মং মং সোয়ের দায় রয়েছে।’ মায়ানমারের জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এমন একসময়ে এলো, যার কয়েক দিন আগেই জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মং মং সোয়ের নেতৃত্বাধীন অভিযানে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, সেনাসদস্যরা সেখানকার পুরুষদের ধরে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে আর তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘ এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও মায়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা আসলে রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য সেখানকার সাধারণ মানুষ নয়।

এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মং মং সোয়ে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের ক্ষেত্রে সামরিক অভিযানের মূল দায়িত্বে ছিলেন। কিছুদিন আগে এই জেনারেলকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়; যদিও এর কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেনি মায়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত অগাস্ট মাসে নির্যাতন নিপীড়ন শুরু হওয়ার পর থেকে এই ডিসেম্বরের মধ্যেই সাড়ে ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, যা মোট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুই তৃতীয়াংশের মতো।

এছাড়াও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত গ্রাম এবং কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।

যে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে তার তথ্য প্রমাণ রয়েছে। যেমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড, খুন, গণহারে ধর্ষণ- এসব অভিযোগ পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মুখ থেকেই এসেছে।

বলা হচ্ছে, অগাস্ট মাসে নিপীড়ন শুরু হওয়ার ছয় মাস আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মায়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে আহবান জানিয়েছিলেন রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে।

জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেছেন, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তার উপর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনি টেলিফোনে অং সান সুচির সাথে কথা বলেছিলেন।

আল হুসেইন বলেছেন, সামরিক বাহিনীর অভিযান বন্ধ করার জন্যে আমি তার প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথেই বলতে হচ্ছে যে, এরকম কিছু হয়নি।

অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীও বলেছেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা কিভাবে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মায়ানমারের একজন সফল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক বলেছেন, তারা ঠিক সেনাবাহিনীর মতো, তাদের কাছেও ছিলো একই ধরনের অস্ত্র। তারা স্থানীয় কিছু ছেলে। আমরা তাদেরকে চিনতাম। সেনাবাহিনী যখন আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছিল, আমাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছিল, তখনও তারা সেখানে ছিল।

 

সূত্র: RTNN

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন