মা-মেয়েকে নিযার্তনকারী সেই চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে মরিয়া প্রভাবশালী মহল: অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি নারী সংগঠনগুলোর

fec-image

মা ও তিন ছেলে-মেয়েকে ‘গরুচুরির অপবাদ’ দিয়ে প্রকাশ্যে নিযার্তনকারী সেই বির্তকিত হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলামকে বাঁচাতে টাকার থলে নিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। ওই মহলটি নিযার্তনের ঘটনা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গঠিত তদন্ত দলকে প্রভাবিত করারও চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ইতোমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানরা মিরানকে নির্দোষ প্রমাণ করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকেও স্মারকলিপি দিয়েছে। এমনকি অর্থের বিনিময়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মানববন্ধন করেছে।

এদিকে আলোচিত গরুচুরির অপবাদের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার মা পারভীন বেগম, মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তারকে গত ২৪ আগষ্ট জামিন দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত। কিন্তু তাদের সাথে গ্রেফতার হওয়া অপর পারভীন বেগমের ছেলে মো: এমরান ও সিএনজি চালক মোহাম্মদ ছুট্টুকে জামিন দেয়নি আদালত। পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

মঙ্গলবার (১সেপ্টেম্বর) চকরিয়া উপজেলা জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের হাকিমের কাছে মা-মেয়ে পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ ও এডভোকেট জাহেদ নেওয়াজ জামিনের আবেদন প্রার্থনা করেন।

এ সময় আদালত কারাগারে থাকা দুই আসামি এমরান ও মোহাম্মদ ছুট্টুর ঘটনার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

নারীর প্রতি অসম্মান ও প্রকাশ্যে নারীদের নিযার্তনের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে নারী সংগঠনগুলোর। নারী সংগঠন কর্মনীড়ের নির্বাহী পরিচালক শাহানা আক্তার বলেন, নারীরা কারও মা বা বোন। কিন্তু আধুনিকযুগে এসে নারীরা অবহেলা বা নির্যাতনের শিকার হবে কেন। যারা নারীকে অসম্মান করবে তাদের আমরা বয়কট করবো।

তিনি আরও বলেন, গত ২১ আগষ্ট বিকালে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে মা ও তিন ছেলে-মেয়েকে গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে ঘুরিয়েছেন। এটা কোনদিন সভ্য সমাজের কাজ হতে পারেনা।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের গ্রাম পুলিশ এবং দুই ইউপি সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। সুষ্ঠু বিচার হোক আমরা চাই। কিন্তু নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যানকে বাচানোর চেষ্টা করলে নারীরা আন্দোলনে যাবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মা-মেয়েকে নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যান মিরানকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। উপজেলার ১৮ ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে বেশকিছু চেয়ারম্যান একটি তহবিলও গঠন করেছেন। ওই তহবিল থেকে দেদারছে টাকা খরচ করে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ট্রাকে করে মানুষ এনে মানববন্ধন করেছে।  এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারকলিপি দিয়েছেন তারা।

অভিযোগ উঠেছে, সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কাজে সহযোগিতা করছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। শোকের মাসে গত ২৯ আগষ্ট ওই পক্ষ চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে জরুরী সভা ডেকে বির্তকিত ইউপি চেয়ারম্যানের অন্যায় কাজের পক্ষ না নেয়ায় নিয়ম বহির্ভুতভাবে তিন নেতাকে শোকজ করেছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো: হাবিবুর রহমান বলেন, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ওই চেয়ারম্যান কোন জায়গায় অবস্থান করছেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারলেই গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন