মিয়ানমারে নয় বছরের মধ্যে আফিমের উৎপাদন সর্বোচ্চ

fec-image

মিয়ানমারে সবশেষ সামরিক অভ্যুত্থানের পর আফিমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে দেশটিতে আফিমের উৎপাদন ছিল ৪২৩ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২২ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৭৯৫ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। পপি গাছের নির্যাস আফিম হেরোইন উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিবিসি

জাতিসংঘ মনে করে, হেরোইন তৈরিতে ব্যবহৃত আফিম রেজিনের মূল্যবৃদ্ধি এবং মিয়ানমারে জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা ও নিরাপত্তাহীনতা এর পেছনে রয়েছে।

ঐ সামরিক অভ্যুত্থান মিয়ানমারের বেশিরভাগ অংশকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে যা এখনও চলছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দফতর ইউএনওডক-এর আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডাগলাস বলছেন, ‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং শাসনব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশ এবং সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত রাজ্যগুলোর সংঘর্ষ-প্রবণ অঞ্চলের কৃষকদের আফিম চাষে ফিরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল খুবই কম।’

মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সীমানা যেখানে মিলিত হয়, যাকে তথাকথিত “গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল” বলা হয়। সেই অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে আফিম ও হেরোইন উৎপাদনের একটি প্রধান উৎস।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে মিয়ানমারের অর্থনীতি দেশে-বিদেশের নানা চাপের মুখোমুখি হয়, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি।

এসব ঘটনা আফিম চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের জোর প্রণোদনা প্রদান করে। বর্তমানে মিয়ানমারই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে বেশি হেরোইনের অন্যতম উৎস এই দেশ। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, মিয়ানমারে উৎপন্ন আফিমের অর্থনৈতিক মূল্য বছরে ২০০ কোটি ডলার। আর পুরো অঞ্চলে হেরোইন ব্যবসার মূল্য প্রায় ১০০০ কোটি ডলার।

কিন্তু গত এক দশক জুড়ে আফিমের বিকল্প শস্য উৎপাদন প্রকল্প এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে আফিমের গাছ পপি চাষ কমে আসছিল।

তবে জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত বার্ষিক আফিম জরিপে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারে আবারও আফিম উৎপাদন আবার বেড়েছে। ২০১৩ সালের পর ২০২২ সালেই সর্বোচ্চ ৮৭০ টন আফিম উৎপাদিত হয়েছে।

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জাতিসংঘ মিয়ানমারে কৃত্রিম মাদক উৎপাদনের ওপরও নজর রাখছিল। তারা দেখছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মিয়ানমারের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির তহবিলের প্রধান উৎস হিসেবে কৃত্রিম মাদক আফিমের চাষকে ছাড়িয়ে গেছে।

আফিম চাষে সিনথেটিক মাদকের চেয়ে অনেক বেশি শ্রমের প্রয়োজন হয়। ফলে কৃত্রিম মাদক তৈরি সে দেশে একটি আকর্ষণীয় অর্থকরী পণ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। এর কারণ, সেনা অভ্যুত্থান-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটে মিয়ানমারের কর্মসংস্থানের অনেক বিকল্প উৎস কমে গেছে।

জাতিসংঘ কর্মকর্তা জেরেমি ডাগলাস বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর উচিত এই পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।’

মিয়ানমারে ইউএনওডকের কান্ট্রি ম্যানেজার বেনেডিক্ট হফম্যান বলছেন, ‘বেলা শেষে, আফিম চাষ আসলেই একটি অর্থনৈতিক বিষয়, এবং শুধু পপি ক্ষেত ধ্বংস করে এর সমাধান করা যাবে না। বিকল্প আয় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া আফিম চাষ এবং উৎপাদন সম্ভবত বাড়তেই থাকবে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন