parbattanews

মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টার শেলে সীমান্তে ১ রোহিঙ্গা নিহত, আহত ৫

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত ১ জন রোহিঙ্গা নিহত এবং আরো ৫ রোহিঙ্গা আহত হয়েছে।

নিহত ইকবাল (১৮) মনির হোসেনকে ছেলে। আহত অপর যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন, সেলিম উল্লাহ মেয়ে সাদিয়া জান্নাত (১০), সাবেকুন নাহার, ছৈয়দ করিমের ছেলে নবী হোসেন (২২) ও করিমের ছেলে ভুলু।

আহত রোহিঙ্গা শিশু সাবেকুন্নাহার

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮.৫০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার ৫ মিনিট আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া আরো দুটো মর্টার শেল সীমান্তে বসবাসকারী ১ বাংলাদেশি বাড়িতে দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। কিন্তু তা বিস্ফোরিত না হওয়ায় বড় ধরনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়া অবিষ্ফোরিত মর্টার শেল

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আজ রাত ৮.৪৫ মিনিটে ঘুমধুমের তমব্রু ২নং ওয়ার্ডস্থ কোনারপাড়া শাহ আলমের উঠোনে আবারো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুইটি মর্টার শেলের গোলা এসে পড়ে যা বিস্ফোরিত হয়নি। এই ঘটনার ঠিক ৫ মিনিট পরে আরো দুটি মর্টার শেলের গোলা সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে পড়ে। যা বিস্ফোরিত হয়ে ১ জন গুরুতর আহত হয়। তাকে স্থানীয়রা উখিয়ার কুতুপালং হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ ঘটনার আরো আধা ঘন্টা পর রাত ৯টার দিকে আরো কয়েকটি মর্টার শেল সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে এসে পড়ে বিস্ফোরিত হলে আরো ৫ জন আহত হয়। স্থানীয়রা তাদেরও উদ্ধার করে একই হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে প্রথমে আসা ইকবাল (১৮) কে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যুদ্ধ বিমান থেকে সীমান্তে  গোলা নিক্ষেপ করলে বিকট শব্দে এই গোলা বিষ্ফোরিত হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি এক উপজাতি যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। বিস্ফোরণে ওই যুবকের পা উড়ে গেছে।। এ ঘটনায় আহত যুবককে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত যুবক অন্যথাইন তঞ্চঙ্গ্যা (২২)। সে তুমব্রু হেডম‍্যান পাড়ার অংক‍্যথাইন তঞ্চঙ্গ‍্যার ছেলে। এদিকে এই ঘটনার পর সীমান্তে লোকজনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিজিবি লোকজনদের সীমান্ত এলাকায় যেতে দিচ্ছে না।

আহত তঞ্চঙ্গা যুবক

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে অথাইন ও অপর এক যুবক জিরো লাইনের কাঁটাতারের বেড়া এলাকায় যায়। সেখানে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণে অথাইন এর বাম পা উড়ে যায়। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। মাইন বিস্ফোরণে ওই এলাকায় একটি গরুও মারা যায়। তবে কী কারণে ওই দুই যুবক বিজিবির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জিরো লাইনে গিয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি।

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজের কাছে ঘটনার সত্যতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তরে জান্তা ও বিদ্রোহীদের মাঝে যুদ্ধ চলমান থাকায় শূন্য রেখায় বসবাসরত রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় জনগণকে সর্বদা সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে দেশের আইন লঙ্ঘন করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। যার কুফল দেখা মিলেছে ৩নং ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা অন্যথাইন তঞ্চঙ্গ্যার কপালে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ‍্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনী টহল জোরদার করেছে এবং স্থানীয়দের সীমান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়রা ধারণা করছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি সীমান্তে এসব মাইন পুঁতে রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি মায়ানমার সীমান্তে সেদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষি বিজিপির মধ্যে লড়াইকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মর্টারশেল ও গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের মধ্যে। সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি।

Exit mobile version