parbattanews

মিয়ানমারের বিভিন্ন দুর্গম জঙ্গলে প্রতিরোধের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে রোহিঙ্গা যুবকরা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুবক। এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সূত্র।

সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে দেড় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা যুবক প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন দুর্গম জঙ্গলে পালিয়ে থাকা রোহিঙ্গা যুবকরা প্রতিরোধের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কয়েকটি সূত্রও রোহিঙ্গা যুবকদের প্রস্তুতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, মা, বোন, স্ত্রীর সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বোনকে তুলে নেওয়া হয়েছে। বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। তাই আমাদের আর হারানোর কিছু নেই। তাই এখন থেকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গা যুবকরা।

কিন্তু কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা যুবকদের হত্যা করেছে। সহিংসতার শুরু হওয়ার পূর্বেই মিয়ানমার বাহিনীর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে টার্গেট করা হয় রোহিঙ্গা যুবকদের। এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়।

সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর দমনপীড়নের পর থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢল নামে। যাদের বেশির ভাগই নারী, শিশু, মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধ। যুবকদের সংখ্যা খুবই কম। যে সব যুবক এসেছে তারা অধিকাংশই সবল নয়। এর মানে হলে-রোহিঙ্গা যুবকরা সেখানেই রয়ে গেছেন এবং সেখানে তারা কিছু একটা করছেন।

তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা যুবকরা বেশ কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মাঝে-মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশেও অবস্থান করেছে। হয়তো সামরিক অভিযানের সময় কিছু নিরীহ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। তবে বেশি সংখ্যক যুবকই জঙ্গলে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা যুবকরা মিয়ানমার বাহিনীকে উচিত জবাব দিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তারা সব কিছু ভেবে-চিন্তে সিধান্ত নিচ্ছে। সময়-সুযোগ বুঝে তারা প্রতিরোধ সৃষ্টি করবে এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শরনার্থী হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে।

যুবকদের সম্পর্কে জানতে চাইলে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, লড়াই করার জন্য যুবকরা রয়ে গেছে। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার বাহিনীকে উচিত জবাব দেওয়ার জন্য।

মুহাম্মাদ হুসাইন নামের এক রোহিঙ্গা জানান, আমাদের শত শত যোদ্ধা পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। আমরা আরাকানকে রক্ষায় শপথ নিয়েছি, সেটা চাকু এবং লাঠি দিয়ে হলেও আমরা করব। কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবকের মন্তব্য ছিল এমন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের তরুণরাও চিন্তা করছেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, প্রথম সুযোগেই আমরা সীমান্ত অতিক্রম করব।

রোহিঙ্গা নেতা ইয়াকুব আলি জানান, সীমান্তবর্তী ১০টি গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক যুবক ‘স্বাধীনতার যুদ্ধে’ যোগ দিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যানভেশন আর্মিতে (এআরএসএ) যোগ দিয়েছে। আর ‘তাদের কী-ইবা করার ছিল! মা-বোন ও স্ত্রী সম্ভম কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাবা-ভাইকে পশুর মতো খুন করা হচ্ছে। এর চেয়ে লড়াই করে মারা যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তারা।

গত ২৫ আগস্ট ভোররাত থেকে রাখাইনে সীমান্তরক্ষী পুলিশের সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের সংঘাত শুরু হয়। এতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। এর মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বাকিরা আনসার সদস্য ছিল। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী বিতাড়ন অভিযান শুরু করে।

তারা রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে এবং ২৬শ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে। অভিযানকালে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নিরস্ত্র রোহিঙ্গা। এদিকে অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে গত কয়েক দশক ধরে ঠান্ডা মাথায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার ও সুচি সরকারের সুপরিকল্পিতভাবে নীরব ‘ জেনোসাইডের’ অন্তরালে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছে, পালিয়ে বাঁচার সময় সাগরে ডুবে মারা গেছে। সুচি সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের রাষ্ট্রবিহীন জাতিতে পরিণত করা হয়েছে।

 

সূত্র: বিডিমর্নিং

Exit mobile version