parbattanews

মিয়ানমারের বুথিডং কারাগারে দেশে ফেরার প্রহর গুনছে ২৬ জন বাংলাদেশী

মিয়ানমারের বুথিডং কারাগারে সাজা ভোগ করে দেশে ফেরার প্রহর গুনছে ২৬ জন বাংলাদেশী। গত ১৭ এপ্রিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা শেষ হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল
বুথিডং কারাগারে সাজা ভোগ শেষ হওয়া টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের মো: হেলালের পাঠানো পত্র থেকে বিষয়টি জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমারে নববর্ষ উপলক্ষে কারাগারে বিভিন্ন সাজা ভোগরত বেশকিছু কয়েদিকে সাজা মওকুফ করে দেয়। এদের মধ্যে বুথিডং কারাগারের ২৬ জন বাংলাদেশীও রয়েছেন। আর এ ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জন জেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ নাফনদী থেকে ধরে নিয়েছিল মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।

এরা হচ্ছেন, টেকনাফ উপজেলার সাবারং ইউনিয়ন শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার ৯ নং ওয়ার্ডের নুরুল কবিরের ছেলে মোহাম্মদ হেলাল, হোসেন আলীর ছেলে জাফর আলম,আব্দু শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ ইসহাক, লেড়ু মিয়ার ছেলে মো: জসিম উদ্দীন, মোহাম্মদ মমতাজের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল, পেঠান আলীর ছেলে শবি রহমান, মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে নূর কালাম,ফরিদ আলমের ছেলে আলী আকবর, আব্দু শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আলী হোসেনের ছেলে সোলতান আহমদ ও রশিদ আহমদ (ক্যাম্প পাড়া), কাদির হোসেনের ছেলে মহি উদ্দীন, মৃত মোহাম্মদ আলমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (কচুবনিয়া) ও মমতাজ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোছাইন ( মধ্যম কুতুবদিয়া)।

মিয়ানমারের আটক বাংলাদেশী জেলেদের স্বজন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার নুরুল কবির, আবদুল গফুর ও মোহাম্মদ আয়াজ জানান, ” মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) গত ২০২২ সালের ১৫ মার্চ জীবিকার তাগিদে সাগরে মাছ ধরতে গেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের পূর্ব দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশের জল সিমানায় মাছ ধরারত অবস্থায় ৪ টি ফিশং বোট ও জাল সহ ১৮ জন বাংলাদেশী মাঝিমাল্লাকে মিয়ানমারের নৌবাহিনী ধরে নিয়ে যায়।

উক্ত ১৮ জন মাঝিমাল্লার মধ্যে ৪ জন অপ্রপ্ত বয়স্ক থাকার কারণে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১৪ জনকে বিভিন্ন মিয়াদে সাজা দিয়ে মিয়ারমারের বুথিডং কারাগারে আটক রাখে।”

আটককৃত মাঝিমাল্লার উপারজিত অর্থ দিয়ে ঘর সংসার চলে। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস সাগরে মাছ ধরে সংসার চালানো। এসব পরিবার গুলো খুব অসহায় ও দিনে এনে দিনে খাওয়া প্রকৃতের লোক। সকলের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি মিয়ানমারের বুটিডং নামক কারাগারের জেল হাজতে আটক থাকার কারণে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।

এক বছরের অধিক সময় ধরে সন্তান হারা মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন ও ছেলে মেয়েরা, এবং পরিবারের অন্যান্য ব্যাক্তি বর্গ তাহাদের অনুপস্থিতে জীবন নির্বাহ করা খুবই কঠিন ও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছেন তারা।

এ প্রসংগে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান,” নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনা অমানবিক। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবেশী দু” দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট করে। এসব বিষয়ে সীমান্ত সম্মেলন গুলোতে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। ”

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ জানান,” আমার এলাকার আবেদুজ্জামানসহ বেশ কজন বাংলাদেশী জেলে মিয়ানমার কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তাদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। ”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান বলেন, ” সাজা ভোগ শেষ করে মিয়ানমারে আটক বাংলাদেশী জেলেদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া হয়েছে। ”

Exit mobile version