parbattanews

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিহীন আন্তঃধর্মীয় সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির উদ্যোগে শুরু হওয়া বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের আন্তধর্মীয় সম্মেলন মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। শান্তির বারতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করে ‘পিস ইন মিয়ানমার’ নামের এই সম্মেলন শুরু হয়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সম্মেলনটি শুরু হলেও শেষদিনের আয়োজনেও উচ্চারিত হয়নি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাম। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা যায়।

চলমান রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চির নেতৃত্বে শান্তি সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলন শুরুর দিনে ইয়াঙ্গুনের এক ফুটবল স্টেডিয়ামে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং প্রার্থনায় অংশ নেন বিভিন্ন ধর্মের ২০ হাজার মানুষ। ওই কর্মসূচিতে মুসলিম নেতা ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হাত মেলাতে দেখা যায়। প্রথম দিনটির ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে মহা বান্দুলো পার্কে জড়ো হতে শুরু করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। ক্ষমতাসীন দলের আয়োজনে আন্তঃবিশ্বাসী প্রার্থনায় অংশ নেন তারা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ছিলো ধারাবাহিক এই আয়োজনের শেষ পর্ব।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দেয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতূল্য আখ্যা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানায়। ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও অভিযোগ তোলেন, কেবলমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। রাখাইনের হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিযে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তোপের মুখে ‘পিস ইন মিয়ানমার’ নামে সব ধর্মের নাগরিকদের নিয়ে সমাবেশের ঘোষণা দেয় সু চির নেতৃত্বাধীন ডি-ফ্যাক্টো সরকারের বেসামরিক অংশ। মঙ্গলবার আয়োজনের শেষ দিনে শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে সবাই জড়ো হয়েছিলেন বলে দাবি করেন এনএলডির মুখপাত্র নিয়ান উইন। তিনি বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা বিনিময় করা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আয়োজনের শেষ দিনেও বৌদ্ধ ভিক্ষু, ইমাম ও পাদ্রীরা একসঙ্গে বসে প্রার্থনা করেন। অংশ নেন রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তারাও। ধর্মীয় নেতারা সবাই মঞ্চে উঠে প্রার্থনায় রত হন এবং সম্প্রীতির ডাক দেন। খিন মারলার তোয়ে নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘সবাইকেই এমনটা করা উচিত। আমাদের মাঝে ঐক্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। সবার সঙ্গে সম্পোর্কন্নয়নের প্রয়োজন।’

মঙ্গলবারের আয়োজনটি সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি করা হলেও পুরো আয়োজনে রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারণ করা হয়নি। আর রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করার মতোও কেউ ছিলো না। স্থানীয় সাংবাদিকরা যারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লিখেছেন তারাও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version