parbattanews

মিয়ানমারের সাথে ৯৪ কিমি সীমান্ত সড়ক নির্মিত হলে বিজিবির কর্মক্ষমতা বাড়বে

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে সীমান্ত সড়ক, সীমান্ত চৌকি ও যানবাহন স্বল্পতার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিজিবির কর্মক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয় না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। উন্নত যোগাযোগের অভাবে মিয়ানমারের সাথে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের ৯৪ কিমি সীমান্ত এলাকার বেশ কিছু জায়গা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

ফলে সীমান্তের ৪৩ থেকে ৬৩নং সীমান্ত পিলার এলাকায় বর্তমানে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।সূত্র মতে, বর্ষা মৌসুম চোরাচালানীদের জন্য পোয়াবোরো, আর বিজিবি জওয়ানদের জন্য নাভি:শ্বাস। দীর্ঘকাল এই অবস্থা চলছে বাংলাদেশ মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম থেকে দোছড়ি সীমান্তে।

এ মূল কারণ হচ্ছে এ সীমান্তে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সীমান্তে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়নি আজও। দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় চোরাচালান দমন, সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে বিজিবি সদস্যদের কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে, সীমান্তে বসবাসরত জনসাধারণের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অনেক সময় বিজিবি জওয়ানদের জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। অথচ বাংলাদেশের ঘুমধুম থেকে দোছড়ি সীমান্তের ঠিক ওপারে মিয়ানমার অংশে হাইওয়ে, পাকা সড়ক ও পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণসহ মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিপি) নজরদারীর যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তার বিপরীতে বাংলাদেশের এপারের সীমান্তে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের সাথে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৩১ বিজিবির ব্যাটালিয়ন সীমান্ত ৭১ কিমি ও জোনের অধীনে ৯৪ কিমি সীমান্ত। এ জোনের অধীনে বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট (বিওপি) রয়েছে ফুলতলী, লেমুছড়ি, পাইনছড়ি, দোছড়ি, ছাগলখাইয়া, তিরেরডিব্বা। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩১-৪০নং সীমান্ত পিলার পর্যন্ত ঘুমধুম-তুমব্রু, রেজু আমতলী, বালুখালী পালংখালী, বাইশফাড়ি পর্যন্ত ১৫ কি.মি. সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে কক্সবাজার ৩৪বিজিবি এবং ৩১ বিজিবি জোনের অধীনে রামু ৫০ বিজিবি নিয়ন্ত্রণ করছে চাকঢালা, ভাল্লুকখাইয়া, আশারতলী, নিকোছড়ি, রেজুপাড়া, মনজয়পাড়া এলাকার ৪০-৪৩ নং সীমান্তের ৮কিমি সীমান্ত এলাকা।

কিন্তু দোছড়ি এলাকার ৫৫-৬৩নং সীমান্ত পিলার সম্পূর্ণ এলাকা অরক্ষিত। অরক্ষিত এ সীমান্তের চেয়ে রাতের আধারে অন্য সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মত ঘটনা প্রায় ঘটছে বলেও জানান, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ। সীমান্তে বসবাসরত একাধিক নাগরিক পার্বত্যনিউজকে জানান, মিয়ানমারের সৈনিকের চেয়ে বাংলাদেশের বিজিবি সৈনিক অগ্রসর হওয়া স্বত্ত্বেও সীমান্ত সড়ক না থাকায় কোন ধরনের ঘটনা ঘটলে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ সময় পর দুর্বল হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয় তাদের।

বিপরীতে মিয়ানমারের রায়বুনিয়া, নায়েখেং, বান্ডুলা ক্যাম্প, অংথ্রাবে ক্যাম্প, ছালিদং ক্যাম্প, ওয়ালিদং ক্যাম্প, অংজু ক্যাম্প,নারাইংচং ক্যাম্প,ককডংগ্যা ক্যাম্প, মেধাইক ক্যাম্প, তুমব্রু রাইট ক্যাম্প, তুমব্রু ঢেকিবনিয়া ক্যাম্প, তুমব্রু খালের মুখ ক্যাম্প, বালুখালী খালের মুখ ক্যাম্পের সৈনিকরা গাড়ি যোগে তাৎক্ষণিক জিরো পয়েন্টে পৌঁছতে পারে।

যার কারণে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকরা হামেশা আতঙ্কগ্রস্থ থাকে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সীমান্ত এলাকা টহল দেওয়া বিজিবির পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সীমান্তের কয়েকজন বিজিবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুম এলেই সীমান্তে দায়িত্বরত জওয়ানদের খুবই সমস্যা হয়। এ সময় চোরাচালান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও কিছুটা বেড়ে যায়।

কারণ জমি, পাহাড়ে কাঁদা মাটিতে ডুবে থাকে। জঙ্গল সৃষ্টি হয়। দ্রুত চলাচল ও অপারেশন করার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। রসদ সরবরাহ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। অনেক বিওপি আছে যেখান থেকে কোন জওয়ান কোন কারণে অসুস্থ্য কিংবা আহত হলে তাকে দ্রুত উপজেলা-জেলা সদরে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করাও ঝুঁকিপূর্ণ পয়ে পড়ে। অথচ মিয়ানমারের ওপারে পুরো সীমান্ত জুড়ে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বিজিপি এক পিওপি থেকে আরেক পিওপিতে মুহুর্তে ছুটে যেতে পারে। ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে বিশেষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত জওয়ান আনতে পারে।

বিজিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সীমান্ত সড়ক পাকা করার প্রস্তাবনা কয়েক দফা উপর মহলে পাঠানো হয়েছে ব্যাটালিয়ন থেকে। বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছেন। পর্যাপ্ত ফান্ডের জন্য হয়তো সড়ক নির্মাণে ধীরগতি হচ্ছে।

ইতিপূর্বে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, জঙ্গি, বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গ্রুপের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং পপি চাষ ও ইয়াবা জাতীয় মাদকের চোরাচালান ঠেকাতেই নাইক্ষ্যংছড়িসহ বান্দরবানের বিস্তীর্ণ সীমান্তে সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবনা সরকারের ঊর্ধ্ব মহলে প্রেরণ করেছেন।

এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী বলেন, সীমান্তে কানেকটিং সড়ক নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। প্রস্তাব অনুযায়ী সড়ক নির্মিত হলে বিজিবির পক্ষে সীমান্ত পাহারা আরও বেশি সহজ হবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৭১ কিমি সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত সড়ক নির্মিত হলে সীমান্তের বিভিন্ন অপরাধ কমে যাবে বলেও তিনি মনে করেন। তবে তিনি যোগদানের পর এ বিষয়ে কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে, সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বান্দরবান সফরে সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রতিক এক সার্ভে জরিপ করে খাগড়াছড়ির রামগড় হতে বান্দরবান হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত ৮শত ৩২ কিমি সীমান্ত সড়ক নির্মাণের প্রক্রিয়া শেষ করেছে। সীমান্ত এলাকার এ দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাপ্ত অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হলে আগামী বছর থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি দেশবাসীকে আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রস্তাবের পর সীমান্তজুড়ে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানায় সরকার। ১৪ ফুট প্রশস্তের সড়কে বৈদ্যুতিক বাতিও বসানো হবে। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শাখায় প্রক্রিয়াধীন আছে।

Exit mobile version