parbattanews

মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধদের কাছে অর্থ যেত বাংলাদেশ থেকে

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
 
একটি এনজিওর মাধ্যমে মিয়ানমারের উগ্রবাদী বৌদ্ধদের কাছে অর্থ যেত বাংলাদেশ থেকে। এই এনজিওর কর্ণধারের স্ত্রী মিয়ানমারের আরাকানভিত্তিক একটি সংগঠনের নেত্রী। বাংলাদেশ থেকে ওই নারী নেত্রীর কাছে তার স্বামী টাকা পাঠাতেন। মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসলমানদের তাড়ানোর কাজে যেসব সংগঠন নেতৃত্ব দিয়েছে ওই সংগঠনটি তার মধ্যে অন্যতম।
 
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার যাওয়ার সময় ওই এনজিও কর্মকর্তা ও উগ্রবাদী বৌদ্ধ নেতা উ শি মং পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তার কাছ থেকে এসব তথ্য জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ দিকে উ শি মংয়ের বোন আওয়ামী লীগ নেত্রী এথিন রাখাইন বলেছেন, তার ভাইকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।
 
উগ্রবাদী বৌদ্ধ নেতা উ শি মংয়ের এনজিওর নাম রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। এই এনজিওর মাধ্যমেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন উ শি মং। তার স্ত্রী মিরা রাজা লিন মিয়ানমারের আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) সিনিয়র সদস্য। তিনি এক সময় গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। তিনি অস্ত্রধারীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছেন এমন অনেক ছবিও আছে। উ শি মংয়ের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ থেকেও ওই ছবি পাওয়া গেছে।
উ শি মং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার যাওয়ার পথে গত ১৯ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গত রোববার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। উ শি মংয়ের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে।
 
জানা গেছে, রাখাইনের উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীকে উ শি মংয়ের এনজিও রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তার স্ত্রী মিরা রাজা লিনের মাধ্যমে এই অর্থ রাখাইনের উগ্র বৌদ্ধদের হাতে পৌঁছতো। রাজা লিন নিজেও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর কাজে সরাসরি অংশ নেন। তিনি মিয়ানমারেই থাকেন। রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতায় রোহিঙ্গাবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করেছে রাজা লিনের এএলপি।
 
রোহিঙ্গাবিরোধীদের অর্থায়নেও সংস্থাটি কাজ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। জাতীয় সংসদের সংরতি নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এথিন রাখাইন বৌদ্ধ নেতা উ শি মংয়ের ছোট বোন। তাদের জন্মস্থান বরগুনার তালতলিতে। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার এলাকায় বসবাস করেন।
 
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর এথিন চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের সংরতি নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। জানা গেছে, রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বরগুনা, পটুয়াখালী ও কক্সবাজার এলাকায় কাজ করে। বাংলাদেশে তার ব্যবসাবাণিজ্য ও শিল্প কারখানাও আছে।
 
বিমানবন্দর থানা পুলিশ তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদে উ শি মংয়ের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যই পেয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে উ শি মং তার স্ত্রীর মাধ্যমে সেই অর্থ মিয়ানমারের উগ্রবাদী বৌদ্ধদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। অপর একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বেশকিছু উগ্রবাদী বৌদ্ধ যুবক ২৫ আগস্টের পর লাপাত্তা হয়ে যায়।
 
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওইসব যুবক মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিল রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে। ওই যুবকদের কিছু ফিরে এলেও এখনো অনেক লাপাত্তা। বিষয়টি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এসেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যারা দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া ছিল তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ওসি নূর ই আজম বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে উ শি মংয়ের কাছ থেকে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
 
উ শি মংয়ের বোন এথিন রাখাইন বলেছেন, তার ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মানুষের জন্য কাজ করতেন, শুধু বৌদ্ধদের জন্য নয়। মুসলমানদের জন্যও কাজ করেছেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক। রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতৃত্বদানে তার মতো আর কোনো লোক নেই। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই তার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে এথিন দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনিভাবে আমরা লড়াই করব।
 
 
সূত্র: নয়া দিগন্ত
Exit mobile version