parbattanews

মিয়ানমারে শিক্ষায় বৈষম্য: শ্রেণি এক, ক্লাসরুম আলাদা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলমান ও হিন্দুদের সঙ্গে যেমন নিপীড়নমূলক আচরণ করা হতো, তেমনি দেশটির শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিল চরম বৈষম্য। রাখাইনের স্কুল-কলেজে বৌদ্ধ শিশুদের মর্যাদা ছিল কয়েক ধাপ ওপরে। শ্রেণিকক্ষে ছিল দুই ধরনের ব্যবস্থা। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী হওয়ার পরও মুসলমান ও বৌদ্ধ শিশুদের আলাদা ক্লাসরুমে বসতে হতো। বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের মুখে দেশটির শিক্ষাবৈষম্যের এই চিত্র উঠে এসেছে।

বামে লালগেঞ্জি মোহাম্মদ শাহ ও তার বন্ধুরামিয়ানমারের মংডুর একটি গ্রামে বাবা-মাসহ বসবাস করতো মিয়ানমারের স্থানীয় টংবাজাই হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ শাহ।তার ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হওয়ার। বাবা আবুল ফয়েজও মিয়ানমারের একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে গ্রামে রোগী দেখতেন। মায়ের নাম রাশিদা বেগম। মোহাম্মদ শাহরা ৬ ভাই-বোন।

দেশে কাঠের বাড়িতে বেড়ে ওঠা ১৫ বছরের মোহাম্মদের ভাষ্য, বৌদ্ধ ধর্মের কোনও শিশু-ই তাদের বন্ধু ছিল না। মগদের সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পর্ক রাখা যেতো না। আর এই রেশ পড়ে স্কুলেও। একই শ্রেণির মুসলমান ও মগ শিশুদের জন্য আলাদা কক্ষ ছিল।

মোহাম্মদ শাহ জানায়, তার ক্লাসে পাঠ্য ছিল, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় ভাষার বই, গণিত, বিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থ। সকাল ১০ টায় স্কুলের উদ্দেশে বেরিয়ে গিয়ে দুপুর ১ টায় ছুটি হলে ফের বাড়ি ফেরা। বিতাড়িত এই রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী কোনও বই আনতে পারেনি দেশ থেকে। এখন ক্যাম্পের মধ্যে স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই সময় কেটে যায় তার। কক্সবাজারের কুতুপালং পশ্চিম পাড়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের তারেকুল ইসলামের দোকানের পেছনেই তাঁবু টানিয়ে মোহাম্মদ শাহরা বসবাস করছে।

রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী আজিজুল হকবাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহ’র কথা হয় লম্বাশিয়া ক্যাম্পে তারেকুল ইসলামের দোকানে বসে। এই শিক্ষার্থী জানায়, ‘ক্লাসের বাইরে প্রাইভেট পড়তে গেলে মাসে মিয়ানমারের মুদ্রায় ২৪ হাজার টাকা দিতে হতো শিক্ষককে।’

কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে বসে কথা হয় মিয়ানমারের মংডু থেকে আসা আজিজুল হকের সঙ্গে। ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতে আজিজুল হক জানান, তিনি ১০ শ্রেণিপর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজি আর গণিত ছিল তার বিষয়। তিনি জীববিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার স্বপ্ন পোষণ করছেন মনে-মনে। তবে ক্যাম্পে এখন রোহিঙ্গাদের নাম-ঠিকানা লিখে সহযোগিতা করছেন।

এ প্রতিবেদককে আজিজুল হক বলেন, ‘মিয়ানমারে একই ক্লাসরুমে একই টেবিলে বসে বৌদ্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না তার। শুধু ক্লাসরুম কেন, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলেও পুলিশের অনুমতি নিতে হতো।’ বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে কোনও মুসলমান শিশু পড়াশোনা করতে চাইলে কেন পড়তে হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইতো স্কুল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে নিপীড়ন তো রয়েছেই।’ আর এ কারণেই স্বদেশ ছাড়তে হয়েছে আজিজুল হকের পরিবারকে।

রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী ইসমাইল দশম শ্রেণি পাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলগুলোয় কোনও মুসলমান শিক্ষক নেই। ২০১২ সালের আগে কেউ কেউ নানা তদ্বির করে শিক্ষক হলেও এরপর থেকে স্কুলগুলোয় কোনোভাবে মুসলমান শিক্ষক নেওয়া হয় না। এছাড়া ওই সময় থেকে মুসলমান ও বৌদ্ধদ শিক্ষার্থীদের আলাদা ক্লাস নেওয়া হয়। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর কলেজে ভর্তি হতে চাইলে কোনও মুসলমান শিক্ষার্থীকে অনুমতি দেওয়া হয় না।’

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version