parbattanews

মিয়ানমারে স্বাধীনতাকামীদের হামলায় ৭০জন নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মিয়ানমার সরকার দাবি করছে রাখাইন রাজ্যে দেড়শোর মতো মুসলিম স্বাধীনতাকামী এক যোগে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন, সীমান্ত ফাঁড়ি এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির অফিস থেকে বলা হচ্ছে, নিহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ জন সদস্য রয়েছে।
মাত্র গতকাল বৃহস্পতিবারই সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন একটি কমিশন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার পথ খুলে দেয়ার আহবান জানানোর পর এই ঘটনা ঘটল।

কমিশন তাদের রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সবধরণের বিধিনিষেধ তুলে নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছিল।

তবে মিয়ানমারের সরকারের বরাতে রয়টার্স প্রেরিত সংবাদে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকারের দাবি, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিদ্রোহী রোহিঙ্গারা ২৪টি পুলিশ পোস্টে সমন্বিত হামলা চালানোর পাশাপাশি একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করার পর পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। রাতভর চলা ওই সংঘর্ষে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২১ জন রোহিঙ্গা, ১০ জন পুলিশ এবং ১ জন সেনা সদস্য রয়েছে।

মিয়ানমারের সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এই সশস্ত্র সংঘাত চলছে রাখাইন রাজ্যের রাথেডং শহরকে ঘিরে, যেখানে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়নামার সরকার ব্যাপক সংখ্যায় সেনা মোতায়েন করেছিল।

সেখানে নতুন করে সেনা অভিযানের মুখে অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকারও চেষ্টা করছিল।
২৪টি পুলিশ পোস্ট হামলার শিকার হয়েছে বলে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে বিবৃতিতে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

ওই বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, প্রায় ১৫০ রোহিঙ্গা একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তাদেরকে প্রতিহত করে। সেনাবাহিনী জানায়, বিদ্রোহীদের হামলা এবং পাল্টা অভিযানে এক সেনা সদস্য, ১০ পুলিশ ও ২১ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। দুই সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

রাখাইন রাজ্য নিয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পক্ষ থেকে এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার একদিন পরই পুলিশের ওপর হামলা হলো। ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে কফি আনান কমিশন।

পাশাপাশি বিশ্বের সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত ওই জনগোষ্ঠীর মানুষের নাগরিকতা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদেরকে ‘বিশ্বের একক বৃহত্তম রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায়’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যদি স্থানীয় জনগনের বৈধ অভিযোগগুলি উপেক্ষা করা হয়, তবে তারা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগদানের প্রতি ঝুঁকে পড়বে।’

কমিশনের আশঙ্কা, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত না করা হলে এবং এ সম্প্রদায়টি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক থেকে গেলে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য জঙ্গিবাদের উর্বর ঘাঁটিতে পরিণত হবে। গত বছরের অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া।

গত আগস্টে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি রাখাইন রাজ্যের অস্থিরতা খতিয়ে দেখতে গঠিত একটি কমিশনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কফি আনানকে অনুরোধ করেন। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি এই কমিশন গঠনে বাধ্য হন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২৪টি পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)। ভবিষ্যতে আরও হামলা হবে বলেও সতর্ক করেছে তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরটি জানিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায়ও এ সংগঠনটিই দায় স্বীকার করেছিল।

মিয়ানমার সরকারের দাবি, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিদ্রোহী রোহিঙ্গারা ২৪টি পুলিশ পোস্টে সমন্বিত হামলা চালানোর পাশাপাশি একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করার পর পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। রাতভর চলে ওই সংঘর্ষ।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী শুক্রবার ভোরবেলা অন্তত বিশটি পুলিশ ফাঁড়িতে মুসলিম স্বাধীনতাকামীরা হামলা চালায়।

মিয়ানমারে সরকারি এক বিবৃতিত বলা হয়েছে ”উগ্রপন্থী বাঙালি বিদ্রোহীরা রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় ঘরে তৈরি বোমা, বিস্ফোরক নিয়ে পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায় এবং বেশ কয়েকটি পুলিশ চৌকিতে সমন্বিত আক্রমণ করে।”

মিয়ানমার সরকার রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গাদের বোঝাতে ”বাঙালি” শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এরা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ঢোকা অবৈধ অভিবাসী।

রাখাইন রাজ্যে সতর্ক অবস্থায় বর্ডার পুলিশ
গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের হামলায় ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে বড় আকারের সামরিক অভিযান হয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় থেকে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সামিল বলে উল্লেখ করে।

চলতি মাসে রাথেটং শহরে নতুন করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ এলাকায় রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই সম্প্রদায়েরই বসবাস। সেকারণে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। আর তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষ হলো।

Exit mobile version