মিয়ানমার থেকে আমদানি হচ্ছে না ছোলা, পেয়াঁজ ও আদা

teknaf pic (bander) 1-6-16 copy

টেকনাফ প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ মিয়ানমার আমদানি ও রপ্তানীর বন্ধের পথে। একমাত্র কাঠ ছাড়া অন্যকোন পণ্য আমদানি হচ্ছে না।এতে করে রাজস্বের আয়ে বিরাট ধরনের ধ্বস নেমেছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে ২৫টি আমদানি পণ্যের মধ্যে মাত্র ৮টি আমদানি পণ্য চালু আছে। এর মধ্যে বনজদ্রব্য কাঠ আমদানি নিয়মিত হলেও বাকি আটটি পণ্য আঁচার, শুটকী, মাছ, বাঁশ, আমদানি অনিয়মিত। এছাড়া রপ্তানীতে শুধু চুল, বিস্কিট, সিমেন্ট, টিউবওয়েল, কাপড় ও ট্যাংকী ছাড়া অন্য কোন পণ্য রপ্তানী হচ্ছে না।

জানা যায়, সীমান্ত বাণিজ্য চালু হবার পর থেকে আমদানিকারকেরা যে হারে ব্যবসা করতো বর্তমানে তাহা ৪ ভাগে এক ভাগও হচ্ছে না। এ জনপদে মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসা চালু হবার পর থেকে সীমান্ত বাণিজ্যের উপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। সীমান্ত বাণিজ্যকে সাইন বোর্ড দেখিয়ে কতিপয় আমদানিকারক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা আমদানি পণ্যের পরিবহন ব্যয় বেশী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হয়রানীর কারণে বৈধ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা থেকে অনেকেই হাত গুটিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফের পণ্যবাহী গাড়ী, বাস এবং যাত্রী হলেই ঘাটে ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচারে তল্লাশীর নামে চলে হয়রানী। প্রতিবাদ করলে ইয়াবার ফাঁদে পড়তে হয় সে জন্য অনেকেই নীরবে সহ্য করে থাকে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, সে দেশে প্রচুর পরিমাণ আমদানি পণ্যের চাহিদা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আমদানি পণ্যের লাভ না হওয়া এবং লোকসানের আশংকায় পণ্য আমদানি করছে না। তবে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা যৌথভাবে এসব পণ্য আমদানী করলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।

টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে আমদানী ও রপ্তানীতে সচল করতে হলে দু‘দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে এলসি প্রথা চালু করতে হবে এবং তাহলেই ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারবে বলে স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা এ মত প্রকাশ করেন।

টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে লোকসান এবং সড়ক পথে সংশ্লিষ্টদের হয়রানী প্রেক্ষিতে প্রকৃত আমদানি কারকেরা মিয়ানমার থেকে সরাসরি সাগর পথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে বড় ধরনের মালামাল আমদানি হচ্ছে না। আসন্ন রমজান উপলক্ষে মিয়ানমার থেকে স্থল বন্দর দিয়ে ছোলা, পিয়াজ ও আদা আমদানি হয়নি বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।

তবে গত ২৮ মে মাত্র ৫ মেট্রিকটন পরিমাণ রসুন আমদানী হয়েছে। মিয়ানমারে প্রচুর পরিমাণ ছোলা মওজুদ থাকলেও আমদানিতে লোকসান হবে মর্মে ব্যবসায়ীরা ছোলা আমদানি করছে না। মিয়ানমারে ছোলার কেজি ১’শত টাকা এবং বাংলাদেশে ৯৫ টাকা।

টেকনাফ সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, সীমান্ত বাণিজ্যে আমদানিতে রাজস্ব আয়ের ধস পড়ার মূল কারণ আমদানী কারকেরা স্থল বন্দরে ব্যবসা লোকসান দেখে তারা মিয়ানমারের রাজধানী হয়ে সাগর পথে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে আমদানী পণ্য সরাসরি নিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্থল বন্দরে স্বল্প মূল্যের আমদানী পণ্য নিয়ে আসছে।

টেকনাফ কাস্টমস সুপার বলেন, গত ৩ মাস যাবৎ স্থল বন্দরে লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা হাত গুতিয়ে বসে আসে। শুধু মাত্র কাঠ, বাঁশ, গবাদী পশু ও আঁচ্রা ছাড়া অন্য কোন বড় ধরনের পণ্য আমদানী হচ্ছে না।

অপরদিকে টেকনাফ স্থল বন্দরের অপারেশন ম্যানেজার মো. আবু নুর খালেদ বলেন, স্থল বন্দরকে গতিশীল করতে হলে বাংলাদেশ মিয়ানমার পর্যায়ে এলসি ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মূখ ফিরিয়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন