মিয়ানমার বন্দরের ৭০ ভাগ মালিকানা নিচ্ছে চীন
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
মিয়ানমারের একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরের ৭০ ভাগ মালিকানা নিতে চীন রাজি হয়েছে। দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উপস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে কিছু কম মালিকানাতেই চীনকে রাজি হতে হয়েছে। মিয়ানমারের এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান ওও মঙ বলেন, চীনের সিআইটিআইসি গ্রুপের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে পশ্চিম রাখাইনের প্রায় ৭.২ বিলিয়ন ডলারের গভীর সমুদ্রবন্দরটির বড় অংশ গ্রহণের জন্য বলেছিল মিয়ানমার।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে এ ব্যাপারে সমঝোতা হয়।
তিনি বলেন, রাখাইনের স্থানীয়রা এবং সারা মিয়ানমারের লোকজন মনে করে, আগের ৮৫/১৫ ভাগ সমঝোতাটি মিয়ানমারের জন্য অন্যায্য হয়ে যায়। লোকজন এই পরিকল্পনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে। ফলে সরকার এখন আরো ভালো চুক্তি করতে যাচ্ছে।
ওও মঙ বলেন, অনুমোদনের জন্য মিয়ানমারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও’র কাছে নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আর্র্থিক ব্যাপারে দুই পক্ষ এখনো একমত হতে পারেনি। তিনি বলেন, প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
বেইজিংভিত্তিক সিআইটিআইসি হলো চীনের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই চুক্তির ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সিআইটিআইসি মিয়ানমারের নির্বাহী সভাপতি ইয়ান শাওবিন মিয়ানমার টাইমসকে সোমবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে বলেন, কোম্পানিটি ৩০ ভাগ মালিকানা সরকারকে নিতে বলেছে। তবে খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার জন্য আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
গত মে মাসে রয়টার্স জানিয়েছিল, চীনের উচ্চাভিলাষী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সিআইটিআইসি কাইয়ুক ফিউ বন্দরের ৭০-৮৫ ভাগ অংশের মালিকানার প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় এশিয়া এবং এর বাইরের এলাকার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে।
চীন কাইয়ুক ফিউ বন্দরে প্রবেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের এই বন্দর দেশটির জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল ও গ্যাস চীনে আমদানির বিকল্প পথ হতে পারে। এর মাধ্যমে তারা মালাক্কা প্রণালি এড়াতে পারবে। মিয়ানমারের বন্দরটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল ও গ্যাস চীনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বন্দরটি হলো দুটি প্রকল্পের অংশ। এতে রাখাইনের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে একটি শিল্প পার্ক স্থাপনের কথাও রয়েছে।
আর্থিক বিষয় নিয়ে ভিন্নমত
প্রকল্পটির আর্থিক বিষয় নিয়ে সিআইটিআইসি এবং মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে বলে ওও মঙ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগের সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মিয়ানমার মাত্র ১৫ ভাগ অংশের তহবিল দিতে সম্মত হয়েছিল।
এখন সিআইটিআইসি ৩০ ভাগ দেওয়র জন্য মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করেছে।
অর্থনৈতিক জোন পরিকল্পনাটি অ্যাক্টিভিস্ট ও অধিবাসীদের বিরোধিতার মুখে পড়েছে। তারা দাবি করছে, এর ফলে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে।
বন্দরটির অবস্থান রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণ অংশে। উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালিত নৃশংস সহিংসতার কোনো প্রভাব এখনো সেখানে পড়েনি।
সূত্র: south asian monitor