মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি চলছেই, ভয়ে বাড়িঘর ছাড়ছেন বাসিন্দারা

fec-image

মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকার সীমান্তে পড়ে। সেটির বিস্ফোরণ ঘটে একজন নিহত ও ছয় জন আহত হন। এই ঘটনার পর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে আজ সকাল থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল মর্টারশেল ও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হতাহতের পর স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ভয়ে সীমান্ত লাগোয়া জুমক্ষেতে ফসল আনতে যেতে পারছেন না তারা। এর মধ্যে আজ সকাল থেকে আবারও সীমান্তের ওপারে কয়েকবার গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

শফিউল আলম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি এখনও থমথমে। আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।’

ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) সোহাগ রানা বলেন, বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে বিজিবি তৎপর রয়েছে। কেউ বাড়িঘর ছেড়েছে কি না এই বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করছি।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়ে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কোনারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সেটি বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মো. ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হ‌য়ে‌ছেন। এ সময় আহত হয়েছে আরও পাঁচ জন।

এর আগে শুক্রবার বিকালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে ‌মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হন উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক তরুণ। বিস্ফোরণে তার বাঁ পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির কারণে ঘুমধুমের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ব‌লেন, ‌‘সীমা‌ন্তের প‌রি‌স্থি‌তি ভালো না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গোলোযো‌গের কারণে ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা যাতে আতঙ্কিত না হয়, সে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করছে প্রশাসন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলমান প‌রি‌স্থি‌তি‌তে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আজ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’

এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। তবে কাজ না হলে জাতিসংঘকে জানানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বার বার সতর্ক করা হলেও তারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তাদের দেশের কনফ্লিক্ট, গুলি তাদের সীমানায় থাকা উচিত। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। মিয়ানমার ভবিষ্যতে সংযত থাকবে আশা করছি।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গোলাগুলি, বাড়িঘর, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন