parbattanews

মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাবর্ষণ: আতঙ্কে এলাকাবাসী

সীমান্তে বিজিবির টহলদল

টানা ৪দিন বন্ধ থাকার পর ফের বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তের কাছাকাছি গোলাবর্ষণ ও মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

গত রবিবার রাতে আকাশসীমা লঙ্ঘন করে যুদ্ধ বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমায় মহড়া দিয়েছে বলেও জানা যায়। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শূন্যরেখায় বসবাসরত রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়রা।

সোমবার (১০ অক্টোবর) সকালে সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে এই বিষয়ে জানতে পারেন পার্বতনিউজের এই প্রতিবেদক।

সীমান্তে বাসিন্দারা জানান, সোমবার ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ডজনাধিক মর্টারশেল নিক্ষেপ ও যুদ্ধবিমানে ৪ বার টহল দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

গোলাগুলির কারণে সীমান্তের ৮ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি ও বাঙালিদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এসবে কান না দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে আহ্বান জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমদ।

সোমবার সকাল ও দুপুরে ঘুমধুম সীমান্তের ৭টি বিওপি এলাকার পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা জানান।

এ দিকে সীমান্তের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি ও রেজুআমতলী এলাকার বাসিন্দা হাফেজ আহমদ, আকবর হোসেন ও ক্যাসালং তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ১০ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সীমান্ত পিলার ১৮ , ৩১, ৩৪ , ৩৭ , ৩৮ , ৩৯ ও ৪০ নম্বরের বিপরীতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিজিপির তুমব্রু রাইটক্যাম্পসহ কয়েকটি স্থান থেকে কিছুক্ষণ পরপর ভারী অস্ত্রের ফায়ার শুরু করে। যা চলে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এর আগে রোববার রাত ২টা ৫৫ মিনিটের থেকে মিয়ানমার বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিয়েছে ৪ বার। যার ফলে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অধিকাংশ মানুষ ঘুম থেকে জেগে এসব শুনে অবাক হয়ে পড়েন।

এদিকে দীর্ঘ ২ মাস ধরে থেকে মিয়ানমারের ওপারে সে দেশের সেনাবাহিনী ও তাদের বিদ্রোহী আরকান আর্মির সাথে সংঘর্ষ চলছে। তাদের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলাও চলে আসছে নিয়মিত। এ সবের মধ্যে গত ১ মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে পড়েছে ৫টি গোলা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে এ ধরনের মর্টার শেলের গোলায় মারা গেছে ১ রোহিঙ্গা। এছাড়াও মাইন বিস্ফোরণে ১ বাংলাদেশি ও অপর ১ রোহিঙ্গা আহত হন। তাদের দু’জনের পা স্থলমাইনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা দুজন এখন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সীমান্তে লোকজনের মাঝে নতুন করে মাইন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য সীমান্তের ৩৫ থেকে ৫৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সীমানার জিরো পয়েন্টে স্থল মাইন বসিয়ে রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। যদিও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করছে এসব কাণ্ড তাদের বিদ্রোহীরা করেছে। যা মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্টদূতদে সাফ জানিয়ে দেন মিয়ানমার ।

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, আসলে কিছুই করার নেই। মিয়ানমারের অংশে তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বিগত দিনে বারবার যুদ্ধ বিমানে টহল, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও স্থলমাইন পুঁতে রাখার মতো ন্যাক্কারজনক কাজ করছে। মানুষ আতঙ্কে। সীমান্তে শ্রমিক বা সাধারণ লোকজন যেতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানালেও তা তারা কর্ণপাত করছে বলে মনে হয় না।

তিনি আরো বলেন, সোমবারের গোলাগুলি র ঘটনা খুবই দুঃজনক। কেননা এ দিনে সকাল ১১টায় বিজিবি মহাপরিচালক ঘুমধুম সীমান্তে আসার কথা আগেও সওর হয়। সীমান্তে গোলাগুলিও ৪ দিন বন্ধ। কিন্তু হঠাৎ সোমবার ভোররাত থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রচণ্ড আওয়াজে মর্টার শেলের গোলাগুলির আওয়াজ সীমান্তবাসী শুনতে পায়। যাতে সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

এদিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমদ সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বিজিপির সাথে ফোনে বা অন্যমাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদেরকে গোলাগুলির বিষয়ে সর্তক করা হয়েছে। শীঘ্রই ক্যাম্প কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হবে। বিজিবির টহল জোরদার আছে। ভয়ের বা আতঙ্কের কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি।

Exit mobile version