parbattanews

মিয়ানমার সীমান্ত চৌকি দখলে সশস্ত্র যোদ্ধা এরা কারা?

মরিয়া হয়ে উঠা সে স্বশস্ত্র যোদ্ধা এরা কারা? যারা সীমান্তে শনিবার সারা দিন গোলাগুলির ঘটনা ঘঠিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশে। যার কারণে বাড়ি-ঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে অন্যত্র রাত কাটাতে হচ্ছে ২ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে। আর তারা এখনও সীমান্ত সড়কের মাঝে মধ্যে টহল দিচ্ছে আর গুলি ফুটাচ্ছে থেমে থেমে । এভাবে একেরপর এক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনকারী যোদ্ধারা কি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডো নাকি জান্তা বিরোধী আরকান আর্মির কমান্ডো! এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

তবে অনেকেই বলছেন, এরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডো। যারা আড়াই মাস আসে এ চৌকিগুলোর দখল হারিয়ে ফেলে তাদের সেনা ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারাই শুক্রবার থেকে সে সব চৌকি পুনরুদ্ধারের গোলাবর্ষণ করেছে দিনভর ।

অপর একাধিক সূত্র দাবি করেন, নতুন করে দখলবাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির কমান্ডো। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ও মিয়ানমারের ওপার থেকে আনা গরু চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জের ধরে আরএসইউ (আরাকান সলিডারিটি ইউনিট) এর সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তারা। শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি থাকায় তারা আরএসইউকে শিক্ষা দিতে এ ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করেন আরাকান আর্মীর একাধিক সূত্র।

এদিকে সীমান্ত চৌকিতে ১৫ ঘন্টা অবরুদ্ধের পর পালিয়ে এসে জিরো লাইনে অবন্থান নেয়া যোদ্ধা শব্বির আহমদ ও মীর আহমদ প্রতিবেদককে বলেন, এরা মিয়ানমার সেনাবাহিনী নয়। তারা আরাকার আর্মির কমান্ডো। তারা বিশ্বাসঘাতক। অন্যদিন তারা টহলে আসলেও তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতো। কিন্ত শুক্রবার হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে বিনা প্রস্তুতিতে তাদেরকে ঘিরে ফেলে তারা । এক সাথে তাদের দখলে থাকা ৭ চৌকিতে হানা দেয় সে কমান্ডোরা । এর মধ্যে ৪টা চৌকি তারা দখলে নেয়। বাকি ৩টার বিষয়ে গরু ব্যবসা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির পর সিদ্ধান্ত হবে। সে বৈঠক হবে আজ বা কালের মধ্যে। বৈঠকের মধ্যস্ততার করছেন আরসা নেতা আতা উল্লার এক আস্তাভাজন কমান্ডার। তিনি গত ১২ ঘন্টা ধরে সীমান্তের ৪২ পিলার নিকটবর্তী এ অজ্ঞাতস্থানে এ বৈঠকের ব্যবস্থা করছেন বলে নিশ্চিত করেন এ যোদ্ধারা। তারা বলেন, উভয় বিদ্রোহী সংগঠন সম্মত হলে নিজেদের মধ্যে আর হানাহানি করবে না তারা। একযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরোদ্ধে লড়বে। তাদের মতে, শনিবার ও রোববারের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৭ জন স্বশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়। আহত হয় ৮ জন।

অপরদিকে র্সীমান্তে বসবাসরত অনেকের মধ্যে সদর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ছাবের আহমদ জানান, তার বাড়ি সীমান্তের ৪৫ নম্বর পিলারের অতি কাছে। তাদের বাড়ির বিপরীতে মিয়ানমারের ছালিদং সীমান্ত চৌকি। সে চৌকিতে দেড়মাস ধরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী স্বশস্ত্র একটি বাহিনী দখল করে নেন। যারা রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা। এখন স্বাধীনতাকামী। কিন্তু শুক্রবার গেল রাতের অন্ধকারে সে চৌকি ঘেরাও করার সময় মাত্র ১০ সদস্য অবস্থানে ছিলো সেই চৌকিটিতে। শনিবার সন্ধ্যায় আর রাতে ৫ যোদ্ধা বন্দি দশা থেকে পালিয়ে আসলেও ৫ জনের হদিস এখনও নেই বলে জানান তাকে।
৪৪ নম্বর পিলার এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার আলী হোসেন জানান, সীমান্তে নতুন করে মিয়ানমারের চৌকি দখল করা যোদ্ধারা আরাকান আর্মির বলে তিনি শুনেছেন। সরকারি বাহিনী নয়।
অপর বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, সীমান্তে গরু চোরাচালান বিষয়ে মিয়ানমারের দু’বিদ্রোহী সংগঠনের মধ্যে এ দখল-বেদখলের ঘটনা ঘটে। যাকে কেন্দ্র করে একে -৪৭ আর এম-১৬ রাইফেল নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী হলে এ ঘটনায় হেলিকপ্টার চক্কর দিতো। এছাড়া অন্য গুলি না ছুঁড়ে মর্টারশেলই ব্যবহার করতো সবসময়। যেমনিভাবে করা হয় সীমান্তের ৩৪,৩৫ থেকে ৪০ নম্বর পিলারে।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি কিছুটা কমেছে। বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের অনেক বাড়ি ফিরেছে।

দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইমরান বলেন, তার সীমান্ত এলাকা ৫০ নম্বর পিলার পয়েন্টে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শনিবার তার এলাকা থেকে পালিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়া লোকজন স্ব-স্ব বাড়ি ফিরে গেছে। তবে আতঙ্ক কাটেনি। সীমান্তে বিজিবি সর্তক আছে।

উল্লেখ্য শুক্রবার রাতে, শনিবার সারাদিন ও রোববার এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সীমান্তে ৭ চৌকিতে হানা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে প্রতিপক্ষকে। গোলাগুলির ঘটনা ঘটে শতশত রাউন্ড। এ নিয়ে বাংলাদেশি অধিবাসীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিজিবি টহল জোরদার করেছে। বহিরাগত লোকজনকে বিনা প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকা প্রবেশে বাধাঁ দেয়া হচ্ছে।

Exit mobile version