parbattanews

মুক্তি পেলেন পরীমনি

ঢাকাই সিনেমার আলোচিত ও সমালোচিত নায়িকা পরীমনি দীর্ঘ ২৮ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি ছাড়া পান বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। এসময় কারা ফটকে পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী ও খালু জসিম উদ্দিনসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে পরীমণিকে এক নজর দেখার জন্য ভক্তরা কারা ফটকে ভিড় করেন।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল ছয়টার মধ্যে জামিন আদেশ না পাওয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়া যায়নি। তবে রাতে তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছায়। যাচাই-বাছাই শেষে আজ (বুধবার) সকাল সাড়ে ৯টায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার হালিমা খাতুন জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৬টার মধ্যে জামিনের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছায়নি। ফলে কারাগার লকআপ হয়ে যায়। তবে তার জামিন আদেশ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। সেখান থেকে তার জামিনের কাগজপত্র রাত ১০টার পরে এ কারাগারে পৌঁছালে তা যাচাই-বাছাই করে বুধবার ৯টা ২১ মিনিটে তাকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সাড়ে ৯টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কারা ফটকের সামনে নায়িকা পরীমনি উপস্থিত ভক্ত ও গণমাধ্যম কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী বলেন, “আইনী প্রক্রিয়া মেনেই আমরা কারাগার থেকে পরীমনিকে নিতে এসেছি।

গতকাল মঙ্গলবার পরীমনির জামিনের জামিননামা আদালত থেকে নিয়ে কেরানীগঞ্জ কারাগারে যেতে হয়েছে। সেখানে এন্ট্রির পর আমরা কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে কারাগারে আসতে পারলে পরীমনিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করতেন। কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা ওই সময়ের মধ্যে কারাগারে যেতে পারিনি।

আজ বুধবার সকালে পরীমনির খালুকে নিয়ে কারাগারের ভেতর প্রবেশ করছি। কারা কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে পরিবারের সদস্য তার খালু জসীম উদ্দিন এবং তার আইনজীবী হিসেবে আমার কাছে হস্তান্তর করেছে”।

রিমান্ডে পুলিশ নির্যাতন করেছে কী না সংবাদকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে পরীমনির যাতে স্থায়ী জামিন আদেশ পাওয়া যায় সেই আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে তিন দফা রিমান্ডের পর জামিন আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার দুপুরে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক মুচলেকায় জামিন আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ।

সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট পরীমনির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তৃতীয় দফায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিএমএম আদালত। সিএমএম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ২২ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরীমনির পক্ষে জামিন আবেদন দাখিল করা হয়। বিচারক ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করেন। জামিন শুনানির দিন আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ২১ দিন বিলম্বে ধার্য্য হওয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী জেডআই খান পান্না ও মো. মজিবুর রহমান।

গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট ২ দিনের মধ্যে কেন জামিন শুনানির নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের বেঞ্চ ওই আদেশ প্রদান করেন। গত রবিবার হাইকোর্টের ওই আদেশ পাওয়ার পর বিচারক ইমরুল কায়েশ হাইকোর্টের রুলের জবাব দেয়ার আগেই ৩১ আগস্ট জামিন শুনানির তারিখ পুনঃনির্ধারণ করেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বিকেলে বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব। এ সময় বাসা থেকে সাড়ে ১৮ লিটার বিদেশি মদ, চার গ্রাম আইস, এক স্লট এলএসডি এবং একটি পাইপ জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় র‍্যাব-১ এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান মাদক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গত ৫ আগস্ট পরীমনির চার দিনের ও গত ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ড আবেদনে গত ১৯ আগস্ট পরীমনির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট পরীমনিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Exit mobile version