parbattanews

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইইউ, বিপদে মিয়ানমার

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতায় মিয়ানমারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি চুক্তি থেকে পিছিয়ে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই চুক্তি করতে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা ছিল সংশ্লিষ্ট কমিটির। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কমিটির সেই সফর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
কবে নাগাদ আবার প্রতিনিধিদল মিয়ানমার যাবে তা নিশ্চিত নয়। ফলে মিয়ানমারে ইইউয়ের বিনিয়োগ সংক্রান্ত এ চুক্তিটি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘ইনভেস্টমেন্ট প্রটেকশন এগ্রিমেন্ট’ (আইপিএ) বা চুক্তি স্বাক্ষর অজ্ঞাত সময় পর্যন্ত স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে মিয়ানমার যাওয়ার কথা ছিল ইইউ প্রতিনিধি দলের।

কিন্তু ১৪ সেপ্টেম্বর কমিটি অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অব দ্য ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট ঘোষণা করে, তারা মিয়ানমার সফর স্থগিত করেছে। এই সফরের মাধ্যমে ইইউ-মিয়ানমারের মধ্যে বিনিয়োগসংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই অবস্থান পরিবর্তন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা। এ-সংক্রান্ত ইইউয়ের কমিটির চেয়ার হলেন বার্নড ল্যাঙ্গ। তিনি বলেছেন, পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত প্রতিনিধিদলের সফর স্থগিত থাকবে।

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক পরিস্থিতিতে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট (ইপি) ১৪ সেপ্টেম্বর একটি রেজলুশন অনুমোদন করেছে। ইইউ-মিয়ানমারের মধ্যে কার্যকর বিনিয়োগ চুক্তি অনুমোদন করে না ওই রেজলুশন। তাই অজ্ঞাত সময় পর্যন্ত প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে পাঠানো স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইপির ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটি।
তিনি আরো বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারের সাথে বিনিয়োগ বিষয়ক একটি চুক্তি করা সম্ভব নয়। ১৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের বিষয়ে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট ওই রেজলুশন অনুমোদন করে। মিয়ানমারের ভেতরে অবস্থানরত ইউরোপীয় ব্যবসায় সম্প্রদায়ের এক সূত্র বলেছেন, মিয়ানমারে এসব পরিস্থিতি বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির কারণে প্রতিনিধিদল তাদের সফর বাতিল করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বড় চুক্তি হওয়ার কথা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মিয়ানমারের মধ্যে।
এ নিয়ে গত এপ্রিলে ইউরোপীয়ান চেম্বার অব কমার্স ইন মিয়ানমার বলেছিল, তারা দু-এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত করতে চায়। আইপিএ চুক্তির আওতায় ইউরোপীয়ান বিনিয়োগকারীদের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরি হতো বলে আশা করা হয়।

শিশু গণতন্ত্রকে বাঁচানোর আবদার মিয়ানমার উপদেষ্টার

রয়টার্স

মিয়ানমারের গণতন্ত্রকে বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং টুন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় যখন ক্ষুব্ধ, তখন সোমবার জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে বসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আবেদন জানান। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ওই সামরিক অভিযানকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে অভিহিত করেছে জাতিসঙ্ঘ।
২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সীমান্তের কাছে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় কথিত রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। এর প্রতিক্রিয়ায় হিংস্র পাল্টা অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এই অভিযান শুরুর পর থেকে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত পাঁচ লাখ সাত হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। অভিযানে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং তাদের বেশির ভাগই বিদ্রোহী বলে দাবি করেছে মিয়ানমার। কিন্তু নিরপেক্ষ সূত্রগুলো নিহতের সংখ্যা সহস্রাধিক বলে জানাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলায় উসকানিদাতা বৌদ্ধভিক্ষু রিমান্ডে
ডেইলি মেইল

শ্রীলঙ্কায় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাতে চরমপন্থী বৌদ্ধদের উসকানি দেয়ার অভিযোগে একজন বৌদ্ধভিক্ষুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির পুলিশ।

সোমবার তাকে গ্রেফতারের পর স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। মাউন্ট লভিনিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন সিংহল রাভয়ার সদস্য ভিক্ষু আকমিমনা দয়ারতেœ থেরোকে এক সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে পাঠায়।
কলম্বো ক্রাইমস ডিভিশনে (সিসিডি) সোমবার সকালে ওই হামলার ঘটনা নিয়ে তিনি বিবৃতি দেয়। রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাতে জনতাকে উসকানি দেয়ার জন্য আরেক বৌদ্ধভিক্ষু রতেœসারা থেরোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়। তবে তাকে এখনো আদালতে হাজির করা যায়নি।

গত সপ্তাহে এই দুই ভিক্ষু এবং তাদের সমর্থকেরা জাতিসঙ্ঘের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বাসভবনে হামলা চালায়। এতে সেখানে দায়িত্বপালনকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে একই সময়ে বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আক্রমণকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল বলে জানা যায়।

সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য চিহ্নিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্তের অধীনে আনা হবে। ওই হামলায় জড়িত অভিযোগে এ পর্যন্ত পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া ১৬ শিশু ও ৭ মহিলাসহ ৩১ জন রোহিঙ্গাকে এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গালের কাছাকাছি একটি পুরনো ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।

২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের ধ্বংস করার পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় উগ্র জাতীয়তাবাদী একটি ধারা তৈরি হয়। দেশটির সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি ওই উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বৈরিতাপূর্ণ আচরণ দিন দিন বাড়ছে।

চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কিছু বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মিয়ানমারের বৌদ্ধভিক্ষুদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই এই সন্ন্যাসীদের অপপ্রচারের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি ‘মানবিক ইস্যু’ করার বদলে শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ (মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ) বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু (মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ) মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার কাজে লাগানো হচ্ছে।

এ দিকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিলক মারাপোনা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা সিংহলি বৌদ্ধদের নেতৃত্বে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এর জন্য দায়ী সিংহলি বৌদ্ধদের দল ‘সিংহলি জ্যোতিকা বালামুলুভা’ চরমপন্থী বৌদ্ধ সংগঠনের সর্বশেষ সংস্করণ যা কুখ্যাত বধু বেলা সেনার (বিবিএস) পথ অনুসরণ করছে। ২০১৪ সালের শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার জন্য দায়ী এই বিবিএস।

সূত্র: নয়া দিগন্ত
Exit mobile version