মুলি বাঁশ চাষ করে সফলতা পেলেন দুই বন্ধু

দশ একর বাগানে এখন সাড়ে ৫ লক্ষ মুলি বাঁশ : আয় করতে পারবেন কমপক্ষে ৫০ বছর

snapshot20130912132413

দুলাল হোসেন : খাগড়াছড়িতে মুলি বাঁশ বাগান করে সফলতার মুখ দেখেছেন দুই বন্ধু। ১০ একর পাহাড়ি টিলার উপর ২০০৯ সালে এই বাঁশ বাগানটি গড়ে তোলেন খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার বড়পিলাক গ্রামের দুই বন্ধু নুরুল ইসলাম ও সানা উল্ল্যাহ। মাত্র তিন বছরে তারা দু’জনে আয় করেছেন দুই লক্ষাধিক টাকা। দু’তিন মাস পরে বিক্রি করতে পারবেন আরো পাঁচ লক্ষ টাকার বাঁশ। এত অল্পসময়ে আর্থিক সফলতা পেয়ে খুশি দুই বন্ধু। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকে করছেন বাঁশের বাগান ।

২০০৯ সালে খাগড়াছড়ির পুরো জেলার মুলি বাঁশে ফল এসেছিল। স্থানীয় মুরুব্বীরা বলেন, চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর পর পর মুলি বাঁশে ফল আসলে বুঝা যায় বাঁশঝাড় উজাড় হয়ে যাবে। মুলি বাঁশ উজাড়ের চিন্তা মাথায় রেখে এবং নিজেদের অনাবাদি প্রায় দশ একর জায়গায় সে সময় মুলি বাঁশের বীজ রোপন করেন দুই বন্ধু সানা উল্ল্যাহ ও নুরুল ইসলাম। বীজের পাশাপাশি রফাই, মিতিঙ্গাসহ আরো কয়েক প্রজাতির বাঁশ রোপন করেন তারা। প্রথম বছর তাদের দু’জনের খরচ হয় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা । দু’বছর পর ২০১১ সালে বাজালি  (ছোট ছোট বাঁশ যেগুলো বীজ থেকে হয়েছে) বিক্রি করে তারা ষাট হাজার টাকার মতো আয় করেন। ২০১২ সালে বাঁশ বাগান থেকে  আয় করেন আরো দুই লক্ষ টাকা। বর্তমানে তাদের বাগানে মুলি বাঁশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাড়ে পাঁচ লাখ বাঁশ আছে। এখান থেকে আগামী কয়েক মাসে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকার মুলি বাঁশ বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সানা উল্ল্যাহ বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় বেশীরভাগ টিলাভুমি হওয়ায় বাঁশ চাষ করা সহজ। বাঁশ চাষে প্রথমে খরচ একটু বেশী হয়, পরে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা প্রতিমাসে বাগান দেখা শোনার জন্য খরচ করতে হয়। বাঁশে রোগ-বালাইও কম হয়। শুধু স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালী লোকজন, যারা বাঁশ করুল সবজি হিসেবে খায় তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলেই হয়।

 
নুরুল ইসলাম জানান, তাদের বাগানে বর্তমানে যত বাঁশ আছে তাতেই লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে কোন অসুবিধা নেই।কষ্টের সংসারে আলো আসার অপেক্ষায় আছেন তিনি।
প্রতিবেশী মো. আবদুল আলী বলেন, নুরুল ইসলাম ও সানা উল্ল্যাহ এখন কৃষকদের মডেল। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বাঁশ চাষে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাঁশ চাষ করে অনেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জহুরুল আলম বাঁশকে গরীবের কাঠ উল্লেখ করে বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাঁশ চাষ করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। সরকারীভাবে বনবিভাগ ও খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে আট হেক্টর জায়গার উপর বাঁশ বাগান করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

বাঁশ চাষে পরিশ্রম কম। বিনিয়োগও কম। আর একবার এই বাগান করা সম্ভব হলে এর থেকে আয় করা সম্ভব কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর। লাভজনক এই খাতকে সরকারীভাবে যথাযথ সহযোগিতা করলে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরবে পাহাড়ের অনেক কৃষকের ঘরে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন