parbattanews

মেঁঘের শব্দে ছুটির ঘন্টা

থানচি প্রতিনিধি:

বাঁশের তৈরি স্কুলের টিনের চাল কালবৈশাখী ঝড়ের উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এই প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যে খুব ভোরে ও সন্ধ্যায় দুই শিফটে ক্লাস চলে স্কুলে। ক্লাসের সময় আকাশের সামান্য মেঁঘের শব্দ হলে ছুটির ঘন্টা বেঁজে উঠে। খোলা আকাশে নিচেই ক্লাস করতে হচ্ছে দুর্গম থাংলং ম্রো পাড়া স্কুলটি প্রথম থেকে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত ৫৬ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

বান্দরবানে থানচি উপজেলা তিন্দু ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে থাংলং ম্রো পাড়ায় স্কুলটির অবস্থান।

থাংলং পাড়াবাসী জানান , পাড়াবাসীদের উদ্যোগের ২০১৫ সালে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় একটি স্কুল ঘর। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগীতা ঢেউ টিন দিয়ে স্কুল ঘরটি নির্মাণ করেন। পাড়াবাসী মাসিক চাঁদা দিয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ করেন। প্রথমে ৩৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। পর্যায়ক্রমে এ বছর সালে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত ৫৬ জন শিক্ষার্থী স্কুলে অধ্যয়ন করে। ২০১৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর  ইউনিসেফ এর সম্মানিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতা থেকে একজন শিক্ষক দিয়েছেন। মোট দুইজন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয় স্কুলটি।

কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে স্কুলের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে জঙ্গলে মধ্যে ফেলেছে। যা বর্তমানে ব্যবহারে অযোগ্য।

সরেজমিনে গিয়ে স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আইচেম ম্রো, লেনরুং ম্রো বলে, প্রচন্ড গরমের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

অপর শিক্ষার্থী থংওই ম্রা ও মাংপুং ম্রো বলে, আমাদের জন্য ঢেউটিনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা স্কুলের ভেতর ক্লাস করতে পারতাম। আমরা লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চাই।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তনয়া ম্রো  জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে স্কুল ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে  তবে পাড়াবাসীরা কোন রকমে স্কুল ঘরটি মেরামত করেছে। কিন্তু অর্থের সংকটে ঢেউটিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই গরমে ও মেঁঘ শব্দ শুনলে স্কুলে ছুটির ঘন্টা দিয়ে দিতে হই।

ইউনিসেফ এর সম্মানিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত শিক্ষক বা পাড়া কর্মী তৃপ্তি ত্রিপুরা  জানান,  স্কুলের  সমস্যা কথা  উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রিটি কুমার তংচংগ্যা জানিয়েছি কিন্তু অনেক দিন হলো কোন সাড়া মেলেনি।

তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মংপ্রুঅং মারমা জানান, আমাদের ইউনিয়নে এই মুহুর্তে কোন বরাদ্ধ নেই। আগামী জুন মাসে বরাদ্ধ হলে সহযোগীতা করতে পারবো। স্কুলের সমস্যা কথা আমি জানি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকট সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে স্কুলের ঘরটি সংস্কার করার খুবই জরুরী।

এসএমসি কমিটি সভাপতি ও পাড়ার প্রধান (কারবারী)  নেকখ্যাইং ম্রো জানান,  আমাদের পাড়ায় প্রায় ৬০ পরিবার সকলের হত দরিদ্র হওয়ায় ঢেউটিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আমি স্কুলের সমস্যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোন প্রকার আশ্বাস পেলাম না।

যোগাযাগ করা হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, আমি ২৮ এপ্রিল থানচিতে যোগদান করছি। এর মধ্যে ৫-৬টা স্কুলে ভিজিট করলাম। থাংলং ম্রো পাড়া স্কুলের সমস্যা আমি জানি না। আমাদের সহকারী শিক্ষা অফিসার বাড়িতে রয়েছেন। তিনি আসলে জানতে পারবো। সহকারী শিক্ষা অফিসার নিজাম উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয়নি।

Exit mobile version