মেজর সিনহা হত্যায় স্বাক্ষীদের হয়রানী এড়াতে প্রতিবেদনে সুপারিশ রয়েছে: বিভাগীয় কমিশনার

fec-image

চেকপোস্টে নিহত মেজর অব. সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত টিম। এতে প্রায় ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শী স্বেচ্ছায় স্বাক্ষ প্রদান করেছেন।

স্বাক্ষীরা হলেন, আবদুল হামিদ (৩৫), মোঃ হামিদ (৩০), সরোয়ার কামাল (৪০), আমিন হোসেন (৩৭), নুরুল আমিন (৩০), সাইফুল আফছার (৩২) জাকির হোসেন (৩০), রশিদ আহমদ (৩২), বশির আহমদ (৪০), ফরিদ আলম (৩৫) ও আনসারুল আলম (৩৩)।
১৬ আগষ্ট রবিবার সকাল ১০ টা থেকে শুরু হওয়া গণশুনানী শামলাপুর ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানী শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারাই ছিল টেকনাফ থানার পুলিশ, ফাঁড়ির পুলিশ, তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী, এঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট গাড়ী চালক, ময়না তদন্তকারী ডাক্তার এবং সুরতহাল তৈরীকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ষাট জন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। এসংক্রান্ত সংশ্লিষ্টদের তথ্য উপাত্তকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা যেন কেউ বাদ না পড়ে সে জন্য ঘটনা স্থলের পাশেই গণশুনানীর আয়োজন করা হয়েছে।

তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি ২৩ তারখি এরমধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে পারব।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বাক্ষীরা কি বলছে তা তদন্তের বিষয়। এটি সরকারকে জানানো হবে। এই তদন্তে ভবিষ্যতে স্বাক্ষীরা যাতে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখিন না হওয়ার জন্য প্রতিবেদনে আনা হয়েছে।

সমস্বয়হীনতা ব্যতিত সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি সংস্থা থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, সরকার সাত কর্ম দিবস সময় দেয়া হয়েছে। ৩ তারিখ কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত্র আসা হয়েছে। এঘটনার উৎস কারণ এবং এটি প্রতিহতের ভবিষ্যতে কি ধরনের সুপারিশ করা হবে সে বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শুরু থেকে কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত যেখানে যেখানে যাওয়া দরকার সেসব জায়গায় গিয়েছি। আমরা মানচিত্র তৈরী করেছি। ঘটনাস্থল তিন বার পরিদর্শন করেছি। এসব জায়গাগুলোরও মানচিত্র তৈরী করেছি।

এছাড়া আমরা আজকে সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ১১ জনকে পেয়েছিলাম। এরমধ্যে ২ জনের স্বাক্ষীর বয়ানে সামঞ্জস্য না থাকায় তা গ্রহন করা হয়নি। বাকি নয় জনকে স্বাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

শুনানিতে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বক্তব্য শুনছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান, সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহা. শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ।

এদিকে সেচ্ছায় স্বাক্ষ্য দিতে আসা আবদুল হামিদ, সরওয়ার কামাল, জাকির হোসেন বলেন- ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে শামলাপুর পুলিশ চেক পয়েন্টে সাদা রংয়ের গাড়ি দেখতে পায়। যা লাইট পোস্টের আলোতে স্পস্টভাবে দেখতে পেয়েছি।

এসময় গাড়ি থেকে এক ভদ্রলোক হাত উপর করে নামতে দেখা গেছে। তাকে পুলিশ পিস্তল তাক করে আছে। এসময় ওই ভদ্রলোকটি পুলিশের সাথে কথা বলছিলেন। এক পর্যায়ে পিস্তল তাক করা পুলিশ ওই ভদ্রলোককে হাঁটুগেড়ে বসতে বলার সাথে সাথে ওপুর্যপোরি তিনটি গুলি চালায়।

এই ঘটনায় আমিসহ অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এভাবে অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীরাও তদন্ত টিমের কাছে বয়ান দিয়েছে বলে তারা জানান।

চেক পয়েন্টের কাছে বয়তুন নুর জামে মসজিদ ঈদুল আযহার আগের রাতে ঈদের নামাজের সময় শুনতে রহমানীয়া তালিমুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানার ছাত্র মো. আবদুল আজিজ, মো. হাসান, সাজ্জাদ হোসেন, রিদুয়ান, সাইফুল ইসলাম, সেফায়াত, মিজবাহ ও তারেক মসজিদের ছাদে উঠছিল।

এসময় পুলিশ তল্লাশি চৌকি হতে ‘থাম থাম’ বলে শব্দ শুনে সেদিকে তাকায়। আমরা সবাই লাইট পোস্টের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পায় একটি সাদা গাড়ি থেকে আর্মি পোশাক পরিহিত একজন লোক হাত উপর করে নামছে। হঠাৎ পুলিশ তাকে গুলি করে।

অপরদিকে গণশুনানী শুরু হওয়ার খবরে শামলাপুর এলাকাসহ টেকনাফ উপজেলার দুর দুরান্ত থেকে শতশত নারী পুরুষ শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প(২৩) ইনচার্জ কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমায়।

এসময় শামলাপুর এলাকার দেলোয়ার, রুবেল, আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত উৎসুক জনতা সদ্য বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের শাস্তি কামনা করে বলেন, মাদকের তকমা লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মী করে রেখেছিল। মাদকের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ক্রসফায়ারের হুমকী প্রদান করত।

তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিরাও ভয়ে কথা বলতে চাইতনা। ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠে সাবেক এই ওসি। টেকনাফবাসীর ওপর আল্লহর রহমত মেজর অব. সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওসি তার নিজের কু কর্মের ফল স্বরুপ বর্তমানে জেলে রয়েছে। ফলে স্বস্থি পেয়েছে টেকনাফবাসী। আমরাও চাই প্রকৃত ইয়াবা কারবারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

এছাড়া বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালীর হাফেজা খাতুন(৩৫) বলেন, গত ১১ মাস পূর্বে আমার স্বামী আবদুল আমিনকে শামলাপুর তদন্ত ফাঁড়ির পুলিশ রাতের বেলায় ঘর থেকে আটক করে নিয়ে যায়। সাথে আমাকেও আটক করে। পরে আমাদের কাছ ৫ লাখ টাকা দাবি করে। দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে রাতের আধাঁরে মেরিন ড্রাইভ সড়কে ক্রস ফায়ার নাম দিয়ে হত্যা করে পুলিশ।

বর্তমানে ৪ ছেলেমেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধহারে জীবন অতিবাহিত করতেছি। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো যাচ্ছে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন