মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধের দাবিতে লামা-আলীকদমে ১৮ মার্চ থেকে পরিবহন ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক সংগঠন। শনিবার বিকেলে লামা-গজালিয়া জিপ স্টেশনে চট্টগ্রাম-লোহাগাড়া-চকরিয়া-লামা-আলীকদম বাস, জিপ, হাইস মালিক ও শ্রমিক সমাবেশে নেতারা যৌথভাবে এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। চিরিঙ্গা-লামা-আলীকদম-থানচি-সুয়ালক-গজালিয়া সড়কে মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।

চিরিঙ্গা-লামা-আলীকদম সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, চকরিয়া-লামা-আলীকদম বাস জিপ মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ কমিটির আহ্বায়ক কামাল আজাদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম-লোহাগাড়া-লামা-আলীকদম যানবাহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার আহমদ, চিরিঙ্গা-লামা-আলীকদম সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইল প্রমুখ।
সমাবেশে লামা উপজেলার বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী টমটম ও থ্রি হুইলার চালিত মাহিন্দ্র মালিক ও শ্রমিক নেতারাও ধর্মঘটে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
    
সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গত ৩২ বছর ধরে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার জনসাধারণসহ স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়মিতভাবে গাড়ি সেবা দিয়ে আসছে। তাছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে এবং প্রাকৃতি দুর্যোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা অব্যাহত রেখে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করেছে গাড়ির মালিকরা। এসব সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের আয়ে প্রায় ৪-৫ শতাধিক মালিক ও দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

সম্প্রতি কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল দুই উপজেলায় দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল কিনে দৈনিক তিনশ টাকা ভাড়ায় উঠতি বয়সী ছেলেদের দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছেন। যার ফলে বাস, জিপ, হাইস ও থ্রি হুইলার মালিক-শ্রমিক যেমন লোকসান গুণছেন, তেমনি যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে চালকসহ ৪ জন আরোহী নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক যাত্রীদের প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গুত্বসহ অকালে প্রাণও দিতে হচ্ছে।

এসব মোটরসাইকেল থেকে সরকারও কোনো ধরনের রাজস্ব পায়না। এমনকি জিপ কিংবা বাসের নির্ধারিত ভাড়ার তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চলেছে মোটরসাইকেলের চালকরা। মোটরসাইকেল বেপরোয়া গতিতে যাতায়াতের কারণে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা সর্বদা আতংকে থাকেন।

নেতারা আরো বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনকে বার বার অবহিত করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরিবহন নেতারা প্রশাসনকে আগামী একসপ্তাহের মধ্যে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার দাবি জানান। অন্যথায় আগামী ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চকরিয়া-লামা-আলীকদমসহ অভ্যান্তরীণ সব সড়কে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলেও নেতারা জানান।

তারা বলেন, অবৈধভাবে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের সত্যতা স্বীকার করে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জাহান খান বলেন, আমরা বেশ ক’বার অভিযান চালিয়ে অবৈধ মোটরসাইকেল উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছি। যা এলাকাবাসীর সহযোগিতার অভাবে স্থায়ী হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোতাকাব্বীর আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন