parbattanews

ক্রেতাশুণ্য মানিকছড়ির কোরবানীর হাট! অর্ধশত খামারে মোটাতাজা গরু নিয়ে দুশ্চিতায় বিক্রেতারা

করোনা’ প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক, সামাকিজ ও ধমীয় কর্মকাণ্ড। দীর্ঘ সময় আয়-রোজগার বঞ্চিত মানুষজনের মাঝে ঈদ-আনন্দের আমেজ নেই। বিশেষ করে মাঝারী পরিবারেও কোরবানের প্রস্তুতি অনেক কম। ফলে আসন্ন কোরবানকে ঘিরে মানিকছড়ি উপজেলার ছোট-বড় অর্ধশত গো-খামার ও কৃষকের ঘরে মোটাতাজা কয়েক হাজার দেশী-বিদেশী জাতের গরু নিয়ে দুশ্চিতায় গো-খামারীরা।

লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে বিক্রিতেও তেমন সাড়া নেই গো-খামারে! ফলে এসব খামারীরা পুঁজি হারানো ভয়ে শংকিত।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও গো-খামার মালিক সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় গো-খামার রয়েছে ৩৯টি। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোরবানে বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে সহস্রাধিক দেশী-বিদেশী গরু মোটাতাজা করা হয়।

এছাড়া উপজেলার গ্রামে-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে কয়েক হাজার দেশী বলদ, ষাঁড় মোটাতাজা করে থাকে। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে কৃষকের ছোট-মাঝারী গরু উঠালেও ক্রেতাশুন্য বাজার! ফলে খামারে মোটাতাজা করা গরু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত গো-খামারীরা।

পাহাড়ের প্রাকৃতিক সবুজ ঘাসে লালিত-পালিত দেশী-বিদেশী গরু কোরবানে চাহিদা থাকায় এ গো-খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন সাধারণ কৃষক ও গো-খামারীরা। গো-খামারে এবং গ্রামের পালিত গরুর নিয়মিত খাবারের তালিকায় প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল এবং খেড়। এসব খাবার সু-স্বাদু হওয়ার কারণে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজায় পরিপুষ্ট হয়। ফলে এসব গরু কোরবানে বেশ চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা।

বিগত সময়ে কোরবানকে ঘিরে এখানকার হাট-বাজার,গ্রামে-গঞ্জে পাইকারদের আনা-গোনায় মূখরিত হয়ে উঠে কোরবানের বেচা-কেনা। আর এ বছর ‘করোনা’ আতংকে এখন পর্যন্ত জনপদের কোথাও কোরবানের গরুর খোঁজে কেউই আসেনি। হাট-বাজারগুলোতে দেশী গরু বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হলেও ক্রেতাশূণ্য বাজার দেখে দুঃচিন্তায় পড়েছে গো-খামারীরা।

শনিবার (১৮ জুলাই) মানিকছড়ির বড় বাজারে প্রচুর দেশী ছোট ও মাঝারী গরু উঠলেও ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাদের মূখে হাসি নেই।

গরু ব্যবসায়ী আনু মিয়া বলেন, প্রতি বছর কোরবানির বাজারে দেশী গরুর চাহিদা প্রচুর। কোরবানের এক দেড় মাস আগ থেকেই শহরের ব্যবসায়ীরা গরুর খোঁজে বাড়ি বাড়ি আসতে শুরু করেন। যার ফলে এখানকার ঘরে ঘরে কম-বেশি দেশী বলদ, ষাঁড় দেশী পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়। অনেক আবার এ খাতে ২০/৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গরু বর্গা দিয়ে রাখেন।

একসত্যাপাড়ার মো. আবুল কালাম বলেন, আমরা নিজ বাড়ীতে দেশীয় পদ্ধতিতে যৎসামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫/৭টি দেশীয় বলদ.ষাড় লালন-পালন করেছি। এ বছর ‘করোনা’র ছোবলে দূর্বিসহ জনজীবনে কোরবানের আনন্দে ভাটার আশংকা দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে!

গিরিকলি এগ্রো ফার্মের মালিক মো. লুৎফর রহমান বলেন, শখের বসে এ বছর থেকে গরু ফার্ম শুরু করেছি। কিন্তু ব্যবসার শুরুতেই মোটাতাজা গরু নিয়ে বিপাকে পড়লাম। ক্রেতাশুন্য মার্কেটে ব্যবসার ভবিষৎ নিয়ে শংকিত।

বাজার ইজারাদার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বাবুল বলেন, বাজারের প্রচুর দেশী গরু উঠেছে। কিন্তু পাইকার নেই, স্থানীয় ক্রেতারা সাধারণত গরু কিনে শেষ সময়ে। তাই গত ২/৩টি বাজার গেছে ক্রেতাশুন্য অবস্থায়!

উপজেলার ‘একে এগ্রো ডেইরী’ ফার্মের মালিক ও উপজেলা ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবার উপজেলার ছোট, মাঝারী ও বড় ৩৯ খামারের পাশাপাশি কৃষকের ঘরে মোটাতাজা দেশীয় পদ্ধতিতে সু-স্বাদু খাবারে পালিত গরু বাজারজাত করা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি।

কৃষকের ছোট ও মাঝারী গরু অনায়াসে বাজারে উঠানো গেলেও গো-খামারের ৫শ-৮শ কেজি ওজনের গরু বাজারে উঠানো খুবই কষ্টকর। যার ফলে লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে আমরা বড় গরুগুলো বিক্রি করে থাকি। এ বছর ক্রেতার সাড়া নেই। আমার ফার্মে মাঝারী ও বড় ১৫/২০টি গরু মোটাতাজা করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ক্রেতাদের সাড়া মিলছেনা।

এছাড়া উপজেলার গো-খামারগুলোতে প্রায় সহস্রাধিক গরু বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে। ‘করোনা’য় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারে এবার কোরবানের প্রস্তুতি না থাকায় চরম মূল্য দিতে হতে পারে খামারীদের! ফলে দুশ্চিতায় পড়েছে খামারী ও কৃষকরা।

উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ৩৯টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামারসহ অসংখ্য কৃষক কোরবানকে ঘিরে সু-স্বাদু খাবার ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরুগুলোতে মোটাতাজা করছে। এখন কোরবানের বাজার ও খামারে গরু বেচা-কেনা এবং পরিচর্যায় আমরা নজরদারী বাড়িয়েছি। যাতে কেউ কোনভাবে প্রতারিত না হয়।

Exit mobile version