parbattanews

মোদক টং-ই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া

pic-09_191041mjkfdddddddd;

স্টাফ রিপোর্টার:

তাজিংডং বা কেওক্রাডং নয়, বরং মোদক টং-ই হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক ও বিশিষ্ট ভূ-তথ্য প্রযুক্তিবিদ ডক্টর সাইদুর রহমান চৌধুরী এ দাবি করেছেন। তিনি বিশ্বের সর্বাধুনিক উচ্চতা পরিমাপক পদ্ধতি ভূতাত্বিক জরিপ ‘শাটল রাডার টপোগ্রাফি পদ্ধতি’ (এসআরটিএম) ব্যবহার করে গবেষণা শেষে এ দাবি করেন। তিনি জানান বিশ্বের উন্নত দেশে এটিই এখন সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য উচ্চতা পরিমাপক পদ্ধতি।

স্থানীয়ভাবে সাকা হাফং নামে পরিচিত এই পর্বতটির উচ্চতা তিন হাজার ৪৫১ ফুট যা বান্দরবানের থানচি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। এ গবেষণায় তিনি দেশের ৭৫টি সর্বোচ্চ পর্বত চূড়াও চিহ্নিত করেন যা নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ পর্বত মানচিত্র তৈরি করেছেন এই গবেষক। ড. সাইদুর রহমানের এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে ৭৫টি পর্বতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও মানচিত্র সন্নিবেশিত করে mapsnmaps.blogspot.com নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত আছে তাজিংডং বা বিজয় । এ পবর্তের অবস্থান বান্দরবানের রুমায়। এর আগে এই উপজেলার কেওক্র্যাডংকে সর্বোচ্চ পর্বত হিসেবে দাবী করা হতো। সরকারিভাবে তাজিংডংয়ের উচ্চতা চার হাজার ৩০০ ফুট দেখানো হলেও তা সঠিক নয় বলে তিন দাবি করেন।

তিনি বলেন এটা বহু আগে নির্ধারিত যদিও নতুন গবেষণার ফল অনুযায়ী উচ্চতার দিক থেকে তাজিংডংয়ের অবস্থান ২৬ তম আর কেওক্রাডংয়ের অবস্থান ৪র্থ। সাইদুর রহমানের মতে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া হল ডুমলং, যার উচ্চতা তিন হাজার ৩০৪ ফুট এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ চূড়া জাও ত্ল্যাং পর্বত। এর উচ্চতা তিন হাজার ২৭১ ফুট।

এ ছাড়া দেশের ৭৫টি পর্বত চূড়ার মধ্যে উচ্চতা ও প্রমিনেন্সের ভিত্তিতে সামিটেবিলিটি স্কোর নির্ধারণ করেছেন তিনি। এ স্কোরের ভিত্তিতে পর্বতারোহীরা আকর্ষণীয় পর্বত নির্ধারণ করে থাকেন। সামিটেবিলিটি স্কোর বিবেচনায়ও মোদক টং প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টেমু ম্যাসিফ পর্বত।

তিনি জানান, ১৯৪৮ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর তৈরী করা এই অঞ্চলের মানচিত্রেও এই পর্বতের স্বীকৃতি মিলেছে। যেখানে সর্বোচ্চ পর্বত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে হাফং পর্বতকে। সাইদুর রহমানের গবেষণায় সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২০০০ ফুটের বেশি উচ্চতাসম্পন্ন ৭৫টি পর্বত চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে ৭৩ টিই বান্দরবানে আর ২ টি খাগড়াছড়িতে অবস্থিত।

এর আগে দেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করে আলোচনায় আসেন এই গবেষক। চবির এ অধ্যাপক গত বছর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরপরই দেশের সমুদ্রসীমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রণয়ন করেছিলেন, যা সরকারের পক্ষ থেকে সমাদৃত হয়েছে এবং এটি জাতিসংঘের বে অব বেঙ্গল লার্জ মেরিন ইকো সিস্টেম প্রকল্পেও বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে।

ড. সাইদুর গবেষণা তার গবেষণা সম্পন্ন করতে মার্কিন গবেষকদের সূক্ষ্ম শাটল রাডার উপাত্ত, স্যাটেলাইট চিত্র, টপোগ্রাফিক মানচিত্র এবং বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের সংগৃহীত তথ্য উপাত্তগুলো ব্যবহার করেছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ইংরেজ পর্বতারোহী গিঞ্জ ফুলেন এবং পরে দেশীয় আরোহীরা মোদক টং-এ আরোহণ করেন এবং জিপিএসের মাধ্যমে উচ্চতার ডাটা সংগ্রহ করে মোদক টং কে (সাকা হাফং) দেশের সর্বোচ্চ চূড়া বলে দাবি করলেও ড. সাইদুরের গবেষণায় বিষয়টির সমাধান পাওয়া গেল।

বর্তমানে এ গবেষক উপকূলীয় এলাকাগুলোর ওপর পাবর্ত্য অঞ্চলের নদী ও তার পানি প্রবাহের প্রভাব জানতে পর্বতগুলো নিয়ে আরো বড় পরিসরে গবেষণা কাজ চালিয়ে নিতে চান আগ্রহ প্রকাশ করেন।

Exit mobile version