সন্তানদের হাতে মোবাইল না দিয়ে বই তুলে দিন- তথ্যমন্ত্রী


স্টাফ রিপোর্টার:
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সন্তানদের হাতে মোবাইল না দিয়ে বই তুলে দিন। কেননা, একটি বইই পারে একটি সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। অমর একুশে বইমেলায় বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক ও গবেষক মাহের ইসলাম লিখিত ‘প্রেক্ষিত: পার্বত্য চট্টগ্রাম সত্য মিথ্যা অপপ্রচার’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের প্রফেসর বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বইয়ের লেখক মাহের ইসলাম, জ্ঞান বিতরণী প্রকাশনীর প্রকাশক সহিদুল ইসলাম, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর আফরীনা হক প্রমুখ। একই অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী মোট আটটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, একটি বই যিনি লেখেন তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে লেখেন। লেখকের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং গবেষণার ফল একটি বই। এই বইয়ের যখন মোড়ক উন্মোচন করা হয়, তা একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এরকম একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছি।

নিজের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, ছাত্রজীবনে আমি একবার গ্রেফতার হয়েছিলাম। তখন আমার পিতাকে অনুরোধ করেছিলাম বই পাঠাতে। তিনি পাঠিয়েছিলেন। জেলখানায় বন্দি থাকার পুরো সময় আমি বই পড়ে কাটিয়েছি। আমার সেল পুস্তকে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। জেলখানায় বইকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশালসের প্রফেসর বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ আছে। বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চল নিয়ে আমি বই লিখেছি। এই অঞ্চল নিয়ে বিশেষ কাজ করার রয়েছে। জনাব মাহের ইসলাম যে বইটি লিখেছে, বইটিকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। আশা করি, বইটি পাঠ করে পাঠক সমাজ পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারবে।

সভাপতির বক্তব্যে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও তথ্যমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসেছেন, এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। অতিতে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই উপস্থিতি বর্তমান সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গুরুত্ব ও মনোযোগ প্রদানের পরিচয় বহন করে। তিনি আরো বলেন, মাহের ইসলামে লিখিত এই বইটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে পাহাড়ি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির বাংলাদেশের অখণ্ডতা সংবিধান সার্বভৌমত্ব শান্তি সম্প্রীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জাতীয় দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বইটি প্রকাশ করেছে জ্ঞান বিতরণী প্রকাশনী।

উল্লেখ্য, দেশবাসী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যা জানতে পারে তার বেশিরভাগই একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচারিত এবং প্রকাশিত হয়- যেখানে সত্যের চেয়ে আবেগ এবং বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। আরো ভয়াবহ বিষয় হলো, সেসব সংবাদ এবং সংবাদ বিশ্লেষণ আমাদের জাতীয় স্বার্থকে যেমন ক্ষুণ্ন করছে, তেমনি আঞ্চলিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সহজলভ্য না-হওয়ায় অনেকেই না-জেনে বা ভুল তথ্য-উপাত্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী তথ্যপ্রবাহে নিজেদের অজান্তেই শামিল হচ্ছেন। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কিছু বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে চেষ্টা করছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্ব, সংকট, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে দেশবাসীকে অবগত করাতে। মাহের ইসলাম তাদের অন্যতম।

মাহের ইসলাম কোনো প্রথাসিদ্ধ গবেষক, প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবী নন। কিন্তু পেশাগত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানের কারণে সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি, রাজনীতি, হিংসা-হানাহানি, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন অপপ্রচার সম্পর্কে অবগত হয়ে প্রকৃত সত্য দেশবাসীকে জানানোর জন্য কলম ধরেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা না-থাকলেও দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান রাষ্ট্রবিরোধী নানা তৎপরতা ও অপপ্রচারের জবাব দিতে একের পর এক প্রবন্ধ লিখতে থাকেন। চলমান বাস্তবতায় সত্যনিষ্ঠ লেখাগুলোর মান, গভীরতা এবং গুরুত্ব বিবেচনায় সিএইচটি রিসার্স ফাউন্ডেশন সেগুলো গ্রন্থাবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর বইটি প্রকাশে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা জ্ঞান বিতরণী। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বাঙালি, সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রবিরোধী একপেশে ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রচারের তথ্য প্রমাণ ও যুক্তিসহ উপযুক্ত জবাব মাহের ইসলামের এই বইটিতে আছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যেকোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিক, গবেষক এবং পাঠকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ একটি বই। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারকদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন