parbattanews

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আরেক সাফল্য: মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হামট্রামিক শহরকে ‘বাংলা টাউন’ ঘোষণা

12211989_10

সাইফুল আজম সিদ্দিকী, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : 

শহর জুড়ে পোল্যান্ড এর পোলিশ ক্যাথোলিক গির্জার গুম্বুজগুলো আকাশচুম্বী। তবে সময়ের পরিবর্তনে গির্জগুলোর পাশে আজ মসজিদ। ঘণ্টা ধ্বনির বদলে আজানের সুর। বেড়েছে শিক্ষার হার, পরিবর্তন হয়েছে শহরের জীবন যাত্রা। কাঁচে ঘেরা দোকানে সাজানো বোরকা, হিজাব, শাড়ী, পাঞ্জাবী। এখানে পথে হাঁটলে দেখা মিলবে বাংলা সাইনবোর্ড, ভেসে আসবে বাংলা ভাষা। বদলে যাওয়া ডিট্রয়েট –হামট্রামিক শহরটি ইতোমধ্যে পরিচিত ‘বাংলাটাউন’ নামে। এবার ঘোষণা এলো সরকারিভাবে রাজ্য সরকার থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডিট্রয়েট –হামট্রামিক শহরে ৬ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টা১৫ মিনিটে মিশিগান রাজ্যের গভর্নর রিক স্নাইডার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন।এর পাশাপাশি ফিতাকেটে বাংলা টাউনের উদ্বোধন করেন।

‘বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’র উদ্যোগে এ চেষ্টা চালানো হয়। টানা দুই বছরের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ডেট্টয়েট-হ্যামট্রামিক শহরের কনান্ট এভিনিউয়ে অবস্থিত বাণিজ্যিক এলাকাকে  ‘বাংলাটাউন’ হিসেবে ঘোষণা করলো রাজ্য প্রশাসন। বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (ব্যাপ্যাক) নামে এক সংগঠন স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেত্রীবৃন্দকে নিয়ে শহরটির উন্নয়েনের কাজ করে চলেছেন।গত ৭ বছর আগে এই এলাকারই একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় ’বাংলাদেশ এভিনিউ।’ সংগঠনটির আরেকটি বড় সাফল্য নির্বাচনে ‘বাংলা ব্যালট’। বর্তমানে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র এর বিভিন্ন শহরে বাংলা ব্যালট প্রচলিত।

বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রেসিডেন্ট ড. সফিউল হাসান স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এর পর সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এহসান তাকবিম(ববি) এক সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশ, আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রা, কালচার রাজ্যের গভর্নরসহ সকল আগত অতিথিগনের সামনে তুলে ধরেন। বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলা টাউন ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলো। এরপর ঐতিহাসিক এই বাংলা টাউন ঘোষণার স্মারক তুলে দেন ‘ব্যাপ্যাক’ এর সহসভাপতি শফিক বারি, সেলিম আহমেদসহ সংগঠনের নেত্রীবৃন্দগণ। অনুষ্ঠান সফল করতে হামট্রামিক শহরের তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত/বাংলাদেশি আমেরিকান কাউন্সিল মেম্বার মোহাম্মাদ কামরুল হাসান, আনাম মিয়া ও আবু মুসা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন।

গভর্নর রিক স্নাইডার তার বক্তব্য বলেন ‘বাংলা টাউন’ আইডিয়া হবে অন্য শহর ও বিভিন্ন জাতিদের জন্য রোল মডেল। উনি গর্বিত এই পরিবর্তনের অংশীদার হতে পেরে। পরে গভর্নর আগত দর্শনার্থী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রশ্নের জবাব দেন। শহরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি সকল সংস্থায় বাংলা ভাষী(দোভাষী) কর্মকর্তা নিয়োগ দিবেন বলে আশ্বাস দেন। এছাড়া শহরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ছোট ও মাঝারি ব্যবসা উন্নয়নে রাজ্য সরকার সবসময় সাথে থাকবে বলে জানা্ন।

‘বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির কর্মকর্তা কামাল রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বাংলাদেশের সাথে ব্যবসায় কার্যকরী প্রস্তাবনা পেশ করতে অনুরোধ করেন। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহেদুল হক জানান, মিশিগান রাজ্যে মোট ৪০ হাজার বাংলাদেশি-আমেরিকানের বসবাস, এর মাঝে এই হামট্রামিক শহরেই বাস করেন বিশ হাজার।

সংগঠনের সহসভাপতি প্রকৌশলী ফয়সল সাইদ বলেন, এ শহরের তিন কাউন্সিলম্যান বাংলাদেশি।এই ঘোষণা বাংলাদেশি আমেরিকানদের একতাবদ্ধতার এক অনন্য উদাহরণ। ‘বাংলা টাউন’ এর সরকারি ঘোষনা মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশিদের এক অভাবনীয় সাফল্য।

সংগঠনের আরেক সহসভাপতি প্রকৌশলী শফিক বারি (তনু) বলেন, তাদের এই সংগঠনটি মিশিগানের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক দায়িত্ব কর্তব্য, নাগরিক অধিকার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও বিনামূল্যে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে।

‘বাংলাটাউন’ ঘোষণায় বাংলাদেশী ছাড়াও স্থানীয় আরব কমিউনিটি, স্থানীয় পোলিশ কমিউনিটি নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিট্রয়েট এর মেয়র –হামট্রামিক শহরের মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ। ঘোষণার আগে বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত হামট্রামিক একাডেমীর ক্ষুদে ছাত্র ও ছাত্রীদের সাথে কিছু সময় কাটান তিনি।

Exit mobile version