বখাটেদের হাত থেকে বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে ভাইকে মারধর

যেকারণে বোনের ইজ্জত রক্ষায় ভাইকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল

fec-image

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় বখাটেদের হাত থেকে বোনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ভাইকে মারধরের ঘটনাটি বেশ আলোচিত। ১১ জুনের ভাইরাল ভিডিওটি নেট দুনিয়াই ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাকে ধিক্কার জানাচ্ছে বিবেকবান সমাজ।

গত ৩১ মে দুপুরে বোনকে উত্ত্যক্তকরণের প্রতিবাদ করায় কিশোর গ্যাং ও বখাটে চক্রের হাতে বেপরোয়া হামলার শিকার হন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. আব্দুল মুনাফ।

ঘটনাটি ১১দিন পরে গত ১১ জুন রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিশোর গ্যাং লিডার মো. জামাল এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। সে কুলিয়া পাড়ার মো. এহসানের ছেলে।

১১ দিন আগের ঘটনাটি কেন প্রকাশ হলো না; ধামাচাপা কেন থেকেছে, আসল রহস্য কী? এসব প্রশ্ন অনেকের মাঝে।

ভিকটিমের মা হাফেজা খাতুন জানিয়েছেন, মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। সম্মানবোধের দিক বিবেচনায় ঘটনা খোলাসাভাবে প্রকাশ করেনি। তবু ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। পরে, ভিডিও সংগ্রহ করে প্রকাশ করলে সবার নজরে পড়ে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছে একটি চক্র। এতে ‘নিয়ামত শক্তি’ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে কথিত বড় ভাইয়েরা। অতি কৌশলে প্রশাসন ও গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে। লিখেছে, “ভিকটিমরা ভাইবোন নয়, তারা প্রেমিক প্রেমিকা। তিক্ততা থেকে পুরাতন প্রেমিক নতুন প্রেমিককে মেরেছে!” সেই অপকৌশলের সুর ধরে কয়েকটি পত্রিকা সংবাদও করেছে। যাতে স্থানীয় ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. নাসির উদ্দিনের বরাতে বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। তবে, এমন কোন বক্তব্য সাংবাদিকদের দেননি বলে দাবি মেম্বার নাসিরের।

এসব বক্তব্যকে বিকৃত; উদ্ভট, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেন মো. নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ১১ জুন রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে ভিডিও দেখার পর সদর মডেল থানার এসআই আমজাদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একদল পুলিশসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পস্থ ভিকটিম আব্দুল মুনাফের বাড়িতে যাই। তার সাথে কথা বলি। এতবড় ঘটনার কথা এতদিন আমাকে জানাওনি কেন? জানতে চাইলে বলে, “বোনের বিয়ের কথা চলছে। সম্মানহানি হবে জেনে প্রকাশ করেনি। তবু থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলেম। পরে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আদনান (হামলাকারীদের একজন) এর নিকট থেকে সংগ্রহ করে। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ার পর সবাই জেনেছে।”

মেম্বার নাছির উদ্দিন বলেন, ১১ জুন রাতভর পুলিশের সাথে ছিলাম। অভিযুক্ত দুইজন মো. রায়হান (২০) ও মো. আরমান প্রকাশ আদনান (২০) কে গ্রেফতারে সহযোগিতা করি। তারপর ঘটনায় অভিযুক্ত আরেকজন মো. জামালের বাড়িতে যাই। তাকে না পেয়ে পিতা মাতার সাথে কথা বলি। পরের দিন সূর্য ডোবার আগেই ছেলেকে হাজির কররে মর্মে পুলিশকে ‘মুছলেকা’ দেয় জামালের পিতা।” তিনি বলেন, “আমার সহযোগিতায় দুই বখাটে আটকের পরই মামলা রেকর্ড করে সদর থানা। সার্বক্ষণিক আমি পুলিশের সঙ্গে ছিলাম।”

নাসির মেম্বার বলেন, “প্রধান অভিযুক্ত জামালের পিতা মাতাকে আমি বলি, ছেলে অপরাধ করবে; পাড়ার বদনাম হবে, তা হতে পারে না। তাকে ধরে দিতে না পারলে এলাকা ত্যাগ করতে হবে।”

দুঃখের সঙ্গে ইউপি সদস্য মো. নাসির উদ্দির বলেন, একটি সংবাদ দেখলাম, যাতে আমার বক্তব্যকে মিথ্যা ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভিকটিমেরা ভাইবোন। দুঃখজনক হলো, “ওই সংবাদে আমার বরাতে ভিকটিদের ‘প্রেমিক প্রেমিকা’ উল্লেখ করা হয়েছে। এমন কথা তো আমি বলি নি।”

সাংবাদিককে বলেছি, “মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম কথা শুনছিলাম। খোঁজখবর নিচ্ছি।”

প্রশ্ন হলো, বিকৃত করে কেন আমার বক্তব্য প্রকাশ করলো? সাধারণ মানুষের মাঝে কেন বিভ্রান্তি ছাড়ানো হলো? ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অন্য কারো ইন্দন আছে কিনা? এসব তদন্ত করতে প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমজাদুর রহমান বলেন, ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরপরই অভিযুক্তদের ধরতে আমরা সাঁড়াশি অভিযান শুরু করি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিনের সার্বিক সহযোগিতায় শনিবার (১১ জুন) রাতভর অভিযান চালিয়ে রায়হান ও আরমান ওরফে আদনান নামের দুইজনকে আটক করা হয়। মেম্বার নাসির উপস্থিত থেকে সহযোগিতা না করলে আসামি শনাক্ত ও তাদের দ্রুত গ্রেফতার হয়তো সম্ভব হতো না। ইউপি সদস্যের সহযোগিতামূলক ভূমিকার জন্য প্রশংসা করেন এসআই মো. আমজাদুর রহমান।

উল্লেখ্য, হামলার ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ভিকটিমের মা হাফেজা খাতুন। যার থানা মামলা নং-২৭/জিআর-৩৮২/২২।

মামলায় এজাহারনামীয় তিন আসামি ছাড়া অজ্ঞতনামা রয়েছে আরও চারজন।

ইতোমধ্যে মামলার দুই আসামি মো. রায়হান (২০) ও মো. আরমান প্রকাশ আদনান (২০) এর দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন