যৌতুকের জন্য নির্যাতন, টাকা পাওয়ার পর তালাক
রাঙামাটি প্রতিনিধি:
যৌতুকের টাকার জন্য গৃহবধুকে স্বামী, শ্বাশুড়ি ও দেবর মিলে শারীরিক নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর তাকে তালাক দেয়া হয়েছে। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতছড়ি ইউনিয়নে ঘটেছে এ ধরনের ঘটনা। এব্যাপরে রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী, শ্বাশুড়ি ও দেবরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্যাতিত আছমা বেগম।
অভিযোগে জানা যায়, ২০০২ সালে ৩১মে উপজেলার বেতছড়ি ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম নিচপাড়া এলাকার ওসমান গণির মেয়ে আছমা বেগমের সাথে একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোখছেদ আলীর ছেলে মোঃ কবির হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বছর খানেক সময় ভাল্ই ছিল। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। বিভিন্ন সময় যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দেয় স্বামী কবির। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে দেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যবসা করার কথা বলে কবির তার শ্বশুরের কাছ থেকে আরো প্রায় ৫০হাজার টাকা নেয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ঘর নির্মাণও করে দেয় আছমার দরিদ্র পিতা। টাকা দেয়ার পর কিছুদিন ভালো চললেও পরে আবারো আগের মত আচরণ করতে থাকে কবির হোসেন ও তার পরিবার। প্রায়শঃ আছমাকে মারধর করতো তার শ্বাশুড়ি গুলেচ্ছা বেগম, দেবর রফিক। নিয়মিত ভরণ-পোষণও দিত না স্বামী কবির হোসেন। ফলে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হতো আছমাকে। এ নিয়ে একাধিক বিচার শালিসও হয় স্থানীয়ভাবে। কিন্তু কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না কবির হোসেন ও তার ভাই রফিক।
কবিরের ভাই রফিক প্রায় সময় বলতো আছমাকে ছেড়ে দিতে। নির্যাতনের কথা জানার পরও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আছমার বাবা কোনো সময় থানায় অভিযোগ করেন নি। কবির ও তার পরিবারের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে সে উপার্জনের জন্য পাড়ি জমায় ঢাকায়। বোনের সাথে কাজ নেয় গার্মেন্টসে। ছয় মাসে ১৫হাজার টাকা জমা করে সে। নানাভাবে ফুসলিয়ে সে টাকাও ভাগিয়ে নেয় কবির। টাকা পাওয়ার পর কবির আছমাকে বলে, ‘যা হবার হয়েছে, বাড়ি চলে এসো, আমরা আবার সংসার করবো।’
কবিরের কথায় সরলভাবে বিশ্বাস করে আছমা বাড়ি চলে আসে। বাড়ি আসার পর কবির আছমাকে তালাকের কাগজ ধরিয়ে দেয়। ঐ এলাকার সামাজিক উন্নয়ন কমিটির সাধারণ-সম্পাদক আবদুল হামিদ লিটু জানায় বিষয়টি নিয়ে অনেকবার শালিস হয়েছে। মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলেকে যথেষ্ট সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কবির ও তার পরিবার বারবার শর্ত ভঙ্গ করেছে। পরে শুনেছি কবির এলাকার বাইরে গিয়ে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।
আছমার বাবা ওসমান গণি জানান, ছোট বেলায় কবিরের বাবা মারা যাওয়ার পর তাকে লালন-পালন করে বড় করে তুলি। উপার্জনের জন্য কাজ শেখায়। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করি। কবির যাতে ভালো করে চলতে পারে সেজন্য যে সময় যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। তার ঋণের টাকাও শোধ করেছি। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কবির এবং তার পরিবারের অন্যায় আচরণের কখনো থানায় অভিযোগও করিনি। তারপরেও মেয়েকে স্বামীর ঘর করাতে পারিনি। কবির তালাক দিয়ে দেয় আছমাকে। এখন সে নানাভাবে মেয়েকে হুমকি দিচ্ছে। অবুঝ দুইটি মেয়ে শিশু নিয়ে আমার মেয়ে কিভাবে আগামী দিনগুলো কাটাবে? তাই বিচারের আশায় আদালতের শরনাপন্ন হলাম। এ ব্যাপারে কবির হোসেন ও তার ভাই মোঃ রফিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।