parbattanews

রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে বাঘাইছড়ির আড়াইশ স্থাপনা ছাই: নিহত ১, ক্ষতি ৩০ কোটি টাকা

14804962_10154138182712725_330430954_n-copy

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নস্থ দূরছড়ি বাজারে ভয়াভহ অগ্নিকাণ্ডে ২২০ টি দোকান ও ২৫টি বসত বাড়িসহ মোট প্রায় আড়াইশটি স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় বের হতে না পেরে শিখা সাহা (৪৫) নামে একজন প্যারালাইজ আক্রান্ত নারী আগুনের শিখায় পুড়ে জীবন হারিয়েছেন  বলেও নিশ্চিত করেছে তার স্বজনরা ।  বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার সময় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

আগুনের খবর পেয়েই লংগদু জোন ও মারিশ্যা জোনের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ, আনসারসহ স্থানীয় জনগণের আপ্রান চেষ্টায় তিন ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। সবাই একসাথে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসায়  ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলোকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু জিনিসপত্রও রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তবে এরইমধ্যে শিখা সাহা জলন্ত শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলেও জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার মো. সেলিম জানান, আজ দুপুর ১২ টার দিকে সুবল দে’র তুলার দোকানে প্রথম আগুনের সূত্রপাত ঘটে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুততম সময়ে আগুনে বাজার ছেয়ে যায়। চোখের সামনেই আগুনের লেলিহান শিখায় পুরে ছাই হয়ে যায় আমার দোকান সহ প্রায় ২৫০ টির মত দোকান ও বসত ঘর।

সুবল দে নামের এক দোকানদারের লেপ তোষকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তের মধ্যে পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী দাউদাউ করে জ্বলা আগুনে ২২০ টি দোকান ও ২৫টি বসত বাড়িসহ মোট প্রায় আড়াইশটি স্থাপনা সম্পূর্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন স্থানীয় বাজার কমিটির সভাপতি আনোয়ার ডাক্তার।

দূরছড়ি ব্যবসায়ি সমিতির নেতা আনোয়ার ডাক্তার জানিয়েছেন বাজারে তাদের হিসেব মতে ২২০টি দোকান রয়েছে। সেগুলোর একটিও আগুনের লেলিহান শিখার কবল থেকে রক্ষা পায়নি। তিনি দাবি করেছেন, আগুনে ব্যবসায়িদের অন্তত ৩০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

আগুনে দুরছড়ি বাজারের সবগুলো দোকান ছাড়াও স্থানীয় খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা।

চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা আরো জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১২টার দিকে দুরছড়ি বাজারের লেপ-তোষকের দোকান মালিক শিমুল দের দোকান থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। লেপ তোষক তৈরির যন্ত্রপাতি থেকে আগুন লেগে তা দ্রুত আশেপাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বাজারের সবকটি দোকান পুড়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার অলিন্দু চাকমা জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ি সুবল দে’র লেপ তোষকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি জানান, আমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি যে, আগুন লাগার সাথে সাথেই সুবল নিজ মোটর সাইকেল নিয়ে বাঘাইছড়ির দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলো।

নিজের দোকান পুড়ে যাচ্ছে অথচ সে পালিয়ে যাচ্ছে এটা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে অনেকের কাছে। সুবলের পিতার নাম বিন্দু দে। সে নিজে একাই থাকতো এখানে। দোকানটি ছাড়া তার কোন আত্মীয়-স্বজনও এ এলাকায় থাকেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাই স্থানীয়দের ধারনা তাকে দিয়েই হয়তো তৃতীয় পক্ষের কেউ পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে দূরছড়ি বাজারের বাসিন্দাদের।

তবে স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে আরও রহস্যজনক ব্যপার হল, গত কিছুদিন ধরেই এ বাজারের উপজাতীয় দোকানদাররা গোপনে তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়া শুরু করেছিল। অনেকেরই আশঙ্কা হয়েছিল শীঘ্রই হয়তো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বাঙ্গালীদের আধিক্যের এই বাজারে। এতেই অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনাকে পরিকল্পিতই মনে করছেন সচেতন মহল। এরই ধারাবাহিকতায়  বৃহস্পতিবার আগুন লাগিয়ে পুরো বাজারটিকে পুড়ে ধ্বংস লীলায় পরিণত করা হয়েছে।

 

এদিকে তাতক্ষনিক  আগুন লাগার খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স.ম. মাহবুবুল আলমের নির্দেশে সেনাবাহিনীর লংগদু জোন কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল আব্দুল আলিম ও লেফটেনেন্ট সাদেক  সহ ২৫ জনের একটি টিম ঘটনা স্থলে পৌঁছায়। পরে সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রনে অংশগ্রহন করে বলেও জানিয়েছে একটি সূত্র।

এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তাজুল ইসলাম জানান, বাঘাইছড়ি উপজেলার দুরছড়ি বাজারে বৃহস্পতিবার সকালে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় তিন’শ দোকানপাট পুড়ে গেছে।

এছাড়াও খবর পেয়ে রাঙামাটি থেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা ঘটনাস্থলের দিকে রওয়ানা দিয়েছেন বলে জানাগেছে। উপজেলা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে তাৎক্ষনিকভাবে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে দুরছড়ি বাজারে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ১লক্ষ টাকা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।

রাঙামাটি জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারকে মাথাপিছু ২০কেজি করে চাউল এবং ৫’শ টাকা আপাতত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

এ অগ্নিকাণ্ডকে রহস্যজনক আ্খ্যায়িত করে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন,  বাজার বয়কটের কারনে যে বাজারে গত তিনমাস ধরে কোন হাটের আয়োজন নাই সে বাজারে আগুন লাগে কি করে! তারপরও এই মর্মান্তিক মানবেতর দূর্ঘটনাটির পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু।

উল্লেখ্য, স্থানীয় উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনের অব্যাহত চাঁদাবাজি ও হুমকির কারনে গত ৩ মাস ধরেই দুরছড়ি বাজারটিতে সাপ্তাহিক হাট বসা বন্ধ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাধারণ উপজাতীদেরকে এ বাজারে না আসার জন্য একরকম বাধ্য করে রেখেছে গত তিনমাস।

Exit mobile version