রাইখালীতে মুখোশধারীদের একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা : আতঙ্কে এলাকাবাসী

fec-image

রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে জেএসএসের পোশাক পরা মুখোশধারীদের একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। এতে পুরো এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর হাফছড়ি একটি উপজাতীয় গ্রামে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় হাত-পা বেঁধে রেখে ঘরের মালামাল, নগদ অর্থ, স্বর্ণলংকার, টাকা-পয়সা সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে ঘরের অধিবাসী উমেচিং মারমা মুখোশধারীদের মুখোশ টান দিয়ে খুলতে চাইলে ওই মহিলাকে বেদম প্রহার করে।

রাইখালী সাফছড়ি ২টি ব্রিজ, ১টি সড়কের ৪ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকার কাজ চলছে প্রায় দেড় বছর যাবৎ। ওখানে একদল উপজাতীয় সন্ত্রাসী চাঁদার দাবিতে এ নিয়ে তিনবার নিরীহ শ্রমিকদের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করেছে।

একই দিন ২২ নভেম্বর (শুক্রবার) রাত ১২টা বাজে তালতলী মতিপাড়ার মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় ২টি বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ ২৫ লক্ষ টাকা ও ৮ ভরি স্বর্ণলংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় উচি মারমা প্রতিবাদ করতে চাইলে তাকে বেদম মারধর করে সন্ত্রাসীরা।

চলতি মাসে মিডিয়ায় আসেনি এরকম আরো কয়েকটি ছোট ছোট ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এলাকার অধিবাসী রুস্তম আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা পূর্বে আর হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি একের পর এক ঘটনা ঘটায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে আছি।

মতিপাড়া এলাকার অধিবাসী সাংসি মারমা বলেন, আমরা কোথায় যাব এখন। ঘরে ঘুমাতেও ভয় পাচ্ছি, কখন আবার আমাদের ওপর মুখোশধারীরা হামলা করে। দীর্ঘ ৩০/৪০ বছরের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচার চাই। এলাকায় শান্তিতে ঘুমাতে চাই।

রাইখালী এলাকার কার্বারী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদার জানান, এ ধরনের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে তিনি বলেন, শুধু রাইখালী নয় পার্শ্ববর্তী কোদালা এলাকায়ও এ ধরনের ঘটনা মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা ঘটিয়ে চলছে। আমরা চেষ্টায় আছি, সেই সকল মুখোশধারীদের ধরার ব্যাপারে।

তিনি বলেন, এ নিয়ে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে।

এদিকে রাইখালী ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারমান মো. এনামুল হক জানান, একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসীর তাণ্ডবে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য রাতে মুখোশ পরে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে সন্ত্রাসীরা। আমরা এদের ধরার জন্য ইতোমধ্যে বৈঠক করেছি। আশা করি, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এর একটি ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরো বলেন, হাফছড়ি ব্রিজ ও সড়কের নির্মাণ কাজ মন্থর গতিতে হওয়ার কারণে পরপর তিনবার উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা হামলা করে নির্মাণ শ্রমিকদের বেদম প্রহার করেছে, কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে।

ঠিকাদার ফারুক জানান, জেএসএসের পোশাক পরিহিত সন্ত্রাসীরা কাজের শুরুতে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের কিছু টাকা দেওয়ার পরও বাদবাকি টাকার জন্য আমার নির্মাণ শ্রমিকদের উপর নির্মমভাবে ১০ জন শ্রমিক ও সাইট ম্যানেজার সেকান্দার হোসেনকে এলোপাতারিভাবে কুপিয়ে আহত করেছে। বিভিন্নভাবে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

এ নিয়ে তিনবার আমার শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। কাজ করা আপাতত বন্ধ রয়েছে। একের পর এক হামলার কারণে আর কেউ কাজ করতে আসতে চায় না। একারণেই কারো ফোন রিসিভ করতেও ভয় পাই। এলাকা তথা কাজের সাইডে যেতে ভয় পাই।

এদিকে চন্দ্রঘোনা থানার অফিসার ইনচার্জ আশ্রাফ উদ্দীন জানান, ঠিকাদার ফারুক ও সাইট ম্যানেজার সেকান্দার হোসেন জেএসএস নামধারীরা সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে আসছে বলে অভিযোগ করেছে। এলাকায় এরা পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আসলে এরা হল উপজাতীয় মুখোশধারী সন্ত্রাসী সঠিক তথ্য পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিব।

ইতোমধো আমরা এদের ধরতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে সকলের সহযোগিতায় এদের ধরা সহজ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন