parbattanews

রাখাইনে ফেরার বিষয়ে ‘শর্ত’ দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা ও সহিংসতার জেরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলও বাংলাদেশের সঙ্গে একমত।

অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা জন্মভূমি ত্যাগ করে আসলেও স্বস্তিতে রয়েছেন উল্লেখ করে রাখাইনে ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশে থাকতেই আগ্রহী।

জন্মভূমিতে ঘর-বাড়ি, স্বজন, নিজেদের সহায়-সম্বল ফেলে আসার পরও তারা সেখানে ফিরতে আগ্রহী নয় কেন? এ বিষয়ে মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হয়।

তারা যে ফিরতে চান না তা নয়, কিন্তু তাদের চাওয়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন।

৬০ বছরের বৃদ্ধ নুর আলমের কাছে জানতে চেয়েছিলাম নিজভূমে ফিরতে চান কিনা। উত্তরে তিনি বলেছেন, ফিরে যেতে চান। তবে সেখানে গেলে আবার যে হত্যা করবে না সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে ফেলে আসা ঘর-বাড়ি-কৃষি জমি। নিজ ধর্ম পালনের শতভাগ স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।

স্ত্রী, ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে প্রায় আড়াই মাস আগে বাংলাদেশে আসা নুর আলম বলেন, ঘর-বাড়ি, ধন-সম্পদ ফেলে এসেছি। অনেক স্বজন রেখে এসেছি। সেজন্য খারাপ লাগছে। নিজের দেশে সবাই তো ফিরতে চায়। কিন্তু সেখানে গেলে আমাদের যদি মেরে ফেলে তাহলে কিভাবে যাব।

‘আঁরারে ভালাভাবে বাঁচিবার নিশ্চয়তা দিলে যাইয়্যুম। মনত কষ্ট পাই নিজর দেশ ছাইজ্যি। এনে ন ছারি।’

রাখাইনে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মংডু থানার তুলাতলি এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, আমাদের তুলাতলিতে এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে কেউ বেঁচে নেই। সবাইকে মেরে ফেলেছে।

‘ধন-সম্পদ ফেলাই আইস্যিদি, এনে নঅ ওয়া। জান (জীবন) বাচাইবাল্লাই আইস্যিদি। এডে (বাংলাদেশে) কষ্ট পাইলেও বাঁচি আছি।’

নুর আলমের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা। চিংড়ি ঘেরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরেনি স্বামী সেলিম। চার বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তাদের। প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করে স্বামীর খোঁজ না পেয়ে ২ শিশুকে নিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন মনোয়ারা।

ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মনোয়ারা বলেন, নাগরিক অধিকার পেলে অবশ্যই ফিরে যাব। মিয়ানমারের মগদের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

‘ইতারা পইন্দোরে অনুত ন ফেলাইবো, মাইয়্যা অলরে র‌্যাপ গইত্যো নঅ। আঁরার বাড়ি-ঘর ফেরত দিব। তইলে আঁরা দেশত যাইয়্যম।’

একই এলাকার আজিজুল হকও বললেন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হলে ফিরে যাবেন তারা। মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারলে পরবাসে থাকার কারণ নেই। তবে মিয়ানমার সরকারের ওপর তাদের সে বিশ্বাস নেই। ফিরে গেলে আবারও হত্যাযজ্ঞ চালাবে মিয়ানমার সরকার-এমন আশঙ্কা তাদের।

‘আঁরারে সম্মান ফিরাই দি বাঁইচতু দিলে বর্মা যাইয়্যুম। আর নইলে যাইতম নঅ। দরকার হইলে আঁরারে এডে (বাংলাদেশে) মারি ফেলক। তঅ বর্মা যাইতাম নঅ।’

পাড়া-প্রতিবেশী-স্বজনদের কিভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে ঘরে আগুন দিয়ে পুরুষদের জ্বালিয়ে দিয়েছে। মেয়েদের অত্যাচার করেছে। তাদের টুকরো টুকরো করে হত্যার পর গর্তে মাটি চাপা দিয়েছে।’

এভাবে নিজ দেশে ফেরার প্রসঙ্গ এলেই শর্ত সাপেক্ষে ফিরতে চান বলে উল্লেখ করেছেন কুতুপালং ক্যাম্পের অধিকাংশ রোহিঙ্গা।

তাদের ভাষ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে তারা এখানে অনেক শান্তিতে আছেন। ভালভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। ফলে এমন কঠিন সময়েও নতুন করে ঘর বেঁধেছেন অনেকে। বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন অনেক যুবক-যুবতী। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশ মেয়ের বয়সই ১৮’র নিচে।

 

সূত্র: বাংলানিউজ

Exit mobile version