রাঙামাটিতে কুচফল খেয়ে মরেছে বন মোরগ! নাকি বিষ টোপে হত্যা?

fec-image

পার্বত্য জেলা রাঙামাটি হ্রদ-পাহাড় বেষ্টিত সবুজ বনাঞ্চল ঘেরা পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ের প্রতি ভাঁজে ভাঁজে বসবাস করে বন্য হাতি, হরিন, সাপ, মোরগ-মুরগীসহ অসংখ্য প্রাণী।

রোববার (০২নভেম্বর) রাঙামাটির উদ্দীপন চাকমা নামের এক যুবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার ফেইসবুক ফেইজে লিখেছেন,‘‘জারবো কুরুঅ জঙ্গলে এক ধরণের নেশাজাতীয় বীজ খেয়ে পড়েছিলো। সেখান থেকে আমাদের পাচক কুড়িয়ে এনেছেন।’’

এর অর্থ হলো- ‘‘পাহাড়ে কুঁচ গাছের বীজ খেয়ে বন মোরগ-মুরগী অচেতন অবস্থায় পড়েছিলো। এরপর একজন বাবুর্চি বন মোরগ-মুরগীগুলো নিয়ে এসে জবাই করেছে খন্ড করেছেন।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে চারদিক থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তবে ঘটনাস্থল কোথায় তার জানা সম্ভব হয়নি।

পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক ও লেখক হোসেন সোহেল তার ফেইসবুকে বন মোরগ/মুরগী হত্যার ব্যাপারে বিষদ ভাবে লিখেছেন। তার লেখার সংক্ষিপ্ত কিছু রুপ তুলে ধরা হলো। ‘‘ আমি নিশ্চিত সন্দেহ রাখি পাহাড়ের এই ১৫টি বনমোরগ/মুরগী সম্ভবত কোন বিষটোপ বা কোনভাবে হ”ত্যার শিকার। অযথা কুঁচফল বা রতির দোষ লাগিয়ে বন্যপ্রাণী শিকার একটি নিশ্চিত অপরাধ। যা মেনে নেয়া কষ্টের। একটি সময় পাহাড়ে জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে অন্য বুনো জীবন খেয়ে বেঁচে থাকতে হতো। যা পুরো পৃথিবীতে একই প্রক্রিয়া হতো। তবে সময় পাল্টেছে এবং পুরো পৃথিবী বন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে স্বীকৃত ফার্মিং পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং সেখান থেকেই মাংসের চাহিদা মেটানো হয়।’’

বন্যপ্রাণী আইনে যা বলা আছে- ‘ এই ধরনের পাখি বা বনমোরগ/মুরগি ধরা ও খাওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ! সেটা আবার সংখ্যায় ১৫টি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ৬ ও ৩৮ অনুযায়ী, কেউ অনুমতি ছাড়া কোনো সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী যেমন বনমোরগ বা বনমুরগী ধরতে, হত্যা করতে, বিক্রি করতে, খেতে বা দখলে রাখতে পারবেন না। এ কাজ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদন্ড, অথবা সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দন্ড দেওয়া যেতে পারে। পুনরাবৃত্তি অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি ৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে, কুঁচ বা রথি হচ্ছে এক ধরণের লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ। অনেকে একে কুঁচফল হিসেবে চিনে। এটি তার নির্ভুল ওজনের জন্য বিখ্যাত। অতীতে সোনা মাপার সোনা ব্যবহৃত এই বীজ। কুঁচের লাল প্রজাতির বীজে লাল অংশ এবং একপাশে কালো রং থাকে। এটি দেখতে সুন্দর কিন্তু এর বীজ খুবুই বিষাক্ত। তাই এটি খাওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে ২০১২সালে  বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ  নিরাপত্তা আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী  এই প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

রাঙামাটি ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো.তবিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ি প্রতিনিয়ত একটি চক্র বিভিন্ন বন্য প্রাণী শিকার করছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক যুবক দাবি করেছে বেশ অনেকগুলো বন মোরগ-মুরগী কুচ ফল খেয়ে মারা গেছে। অতীতেও পাহাড়ে কুচ ফলের গাছ ছিলো। কুচফল খেয়ে বন মোরগ-মুরগী মারা গেছে এমন ঘটনা কখনো। তবে কুচফল অনেক বিষাক্ত। এ ফল খাওয়া যায় না, খেলে ক্ষতি হবে। বিষটোপ দিয়ে এতগুলো বন মোরগ-মুরগী হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি  প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন