parbattanews

রাঙামাটিতে টেন্ডারবাজিতে বেপরোয়া সিন্ডিকেট চক্র: কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

tender-tenderbaji

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে টেন্ডারবাজি । সংঘবদ্ধ সর্বদলীয় সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক চলা টেন্ডারবাজিতে রাঙামাটি শহরে সৃষ্টি হয়েছে রীতিমতো বিশৃখংলা।এসব দেখার যেন কেউ নেই। ওইসব চক্রটির হাতে সরকারী প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার আহবানকারী কর্তৃপক্ষগুলো জিম্মি ও অসহায় হয়ে পড়েছে।

 

এসব নিয়ে শহরে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন নির্বিকার । ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ওই টেন্ডারবাজ চক্র। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ঠিকাদার নেতাকর্মীরা এক জোট হয়ে টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি করার অভিযোগ উঠে। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও সর্বদলীয় সিন্ডিকেট করে চক্রটি প্রতিনিয়ত রাঙামাটির বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন ঠিকাদাররা। যার প্রেক্ষিতে বঞ্চিত ঠিকাদারদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। 

তিন পার্বত্য জেলা থেকে নির্বাচিত মহিলা সাংসদ সম্প্রতি রাঙামাটি জেলা পরিষদে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করার সময়ে প্রতিবেদক টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনরোধ জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সর্বদলীয় চক্রটিকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ  সংশ্লিষ্ট কর্তারা। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সর্বদলীয় সিন্ডিকেট চক্রের কারণে রাঙামাটির সাধারণ ঠিকাদাররা ঠিকমত কাজ পাচ্ছে না।

অভিযোগে জানা যায়, এসব সুবিধাভোগীরা সিন্ডিকেট করে প্রতিনিয়ত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। সুবিধাভোগী চক্রটি কখনো দলীয় প্রভাব, কখনো মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। সুবিধাবাদী এই চক্রটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি জেলা পরিষদ, ফ্যাসিলিটিজ, গণপূর্ত বিভাগ ,পানি উন্নয়ন বোর্ড,সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সকল সংস্থায় সর্বাগ্রেই রয়েছে তাদের একছত্র আধিপত্য ও দাপট। রাঙামাটিতে কোটি কোটি টাকার কাজ গোপনে সুকৌশলে হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। আর টেন্ডারবাজি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে সংঘর্ষ এখানে লেগেই আছে।

গত ১২ মে রাঙামাটির বনরূপায় বিদ্যুৎ বিভাগের দরপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছিলো। সংঘর্ষে তাদের মধ্যে ৩ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষে ভাংচুর করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষ ও কম্পিউটার সামগ্রী। ওই দিন  সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের বনরূপা চম্পক নগর কার্যালয়ে ২৫ লাখ টাকার ৫টি কাজের দরপত্র জমাদেয়াকে কেন্দ্র করে ঠিকাদাররা নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষেই পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ঠিকাদারের দুই গ্রুপ। সংঘর্ষকারীরা পরস্পরকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করায় বনরূপায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলো। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিসস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংর্ঘষকারীরা সরকার, বিরোধীদল ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংঘঠনের নেতাকর্মী ছিলো বলে সূত্র জানায়। কাজ বঞ্চিত ঠিকাদাররা জানায়,কেউ সিডিউল কিনলেও সিডিউল জমা দেয়ার নির্দিষ্ঠ দিনে ওই সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক টেন্ডার বাক্স পাহারা দেয়ায় এবং আগে থেকে ভয় দেখানোয় সিডিউল ক্রয় করে সব ঠিকঠাক করলেও সিন্ডিকেটের বাধার কারণে টেন্ডার জমা দেযা সম্ভব হয় না। বিএনপির কিছু নেতাও সরকার দলীয় এ চক্রের সাথে আঁতাত করায় তারাও কাজ বাগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।  সরকারী উন্নয়ন  কাজগুলো লুটপাটে ব্যস্ত সর্বদলীয় ওই  সিন্ডিকেট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যোগসাজসে এই চক্র কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার কোন কোন কাজ  কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়া কৌশলে গোপন ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়মে বিগত ৫ বছর ধরে কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগি করে সর্বদলীয় সিন্ডিকেট চক্রটি। সাধারণ ঠিকাদাররা অভিযোগে বলেন,দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কোন প্রকার টেন্ডার না হওয়ায় কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছি। তারা আরও জানায়,দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রকল্প নিয়ে কোন কাজ না করে অন্য প্রকল্পের ছবি সংযোজন করে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে উৎকোচ দিয়ে তাদের থেকে অনাপত্তি সনদ নিয়ে বিল উত্তোলনেরও নজির রয়েছে।

 অভিযোগে জানা যায়, গত ৪ বছরে শুধুমাত্র কয়েকটি টেন্ডার নোটিশ ছাড়া আর কোন নোটিশ ওপেন করা হয়নি। দরপত্রের বিজ্ঞাপন জাতীয় দৈনিকে দেয়ার কথা থাকলেও তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। আর পিডিবি’র টেন্ডার প্রকল্প অফিস ব্যতীত প্রশাসনিক অফিস বা অন্য কোথাও গ্রহণের ব্যবস্থা না থাকায় এসব নিয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

Exit mobile version