parbattanews

রাঙামাটিতে টেন্ডারবাজি : পিডিবির কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগি

1365_f

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙাামাটি
রাঙামাটিতে অব্যাহতভাবে চলছে বেপরোয়া টেন্ডারবাজি। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বাকি নেই, যেখানে উন্মুুক্ত ও স্বাধীনভাবে টেন্ডারগ্রহণ সম্পন্ন করা যায়। জেলার সবগুলো প্রতিষ্ঠানে সব টেন্ডারে একক আধিপত্য কেবল ক্ষমতাসীন দলীয় ঠিকাদার চক্রের।

প্রতিটি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে যুবলীগ, ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী মাঠে প্রকাশ্য মহড়ায় থাকলেও এর মূলে নেপথ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা। তাদের নেতৃত্বেই প্রভাবশালী ঠিকাদার চক্রটি। চক্রটি কিছু লভ্যাংশে সাধারণ নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে যাবতীয় টেন্ডারের কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে।

এবারও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দুটি টেন্ডারে প্রায় কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে ভাগাভাগি করেছে ঠিকাদার চক্রটি। বুধ ও বৃস্পতিবার পিডিবির রাঙামাটির চম্পকনগরের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্প অফিসে দুটি টেন্ডারের দরপত্রগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার দরপত্রগ্রহণ করা হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকার অধিক টেন্ডারের নয় গ্রুপ কাজের। এতে ৪৮ সিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে কেবল ২০টি। পরদিন বৃহস্পতিবার দরপত্রগ্রহণ করা হয় প্রায় ৫৮ লাখ টাকা টেন্ডারের দু’গ্রুপ কাজের। এ দু’গ্রুপ কাজে সিডিউল বিক্রি হয়েছে ১৪টি। কিন্তু জমা পড়েছে নয়টি। সেগুলোর মধ্যে সিন্ডিকেটের বাইরে এক যুবলীগ নেতা চ্যালেঞ্জ করে অতিরিক্ত দুটি সিডিউল জমা দেন বলে জানা গেছে। তবে সন্তোষজনক লভ্যাংশের বিনিময়ে ওই যুবলীগ তার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে জমা দেয়া সিডিউল প্রত্যাহার করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, পুন:আহবানকৃত দুটি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে মাঠে মহড়ায় ছিলেন যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু নেপথ্যে মূল নিয়ন্ত্রণের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে সুরঞ্জিত সেন পাপ্পু বলেন, কাজগুলো আগের টেন্ডারে পাওয়া। কিছুটা সমস্যা হওয়ায় পুনঃদরপত্র আহবান করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই আবার টেন্ডার জমা দিতে হয়েছে। সাবেক জেলা যুবলীগ নেতা জমির উদ্দিন বলেন, তিনি টেন্ডারে জড়িত নন। এর দায়িত্বেও এবার তিনি নেই। রাঙামাটি পৌরআওয়ামীলীগের সভাপতি সোলায়মান বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর থেকে ক্রয় দরপত্র করে জমা দিয়েছি। যুবলীগ নেতা মুজিবর রহমান টেন্ডার প্রসঙ্গে বলেন,আমার পুর্বে দাখিলকৃত দরপত্র সমস্যা হওয়ায় পুনঃদরপত্র অংশগ্রহন করেছি।

এদিকে টেন্ডার নিয়ে জিম্মি টেন্ডার আহবানকারী কর্তৃপক্ষগুলো। প্রতিবার টেন্ডার আহবান করা হলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে ক্ষমতাসীন দলীয় টেন্ডারবাজরা। টেন্ডারগুলো আয়ত্বে রাখতে আধিপত্য বিস্তার করা হয়ে থাকে একদম নাটকীয়ভাবে। প্রভাব খাটানো হয় ভেতরে বাইরে। থাকে মাঠে মহড়া। আর ভেতরে টেন্ডারবাক্সে কঠোর পাহারা। সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ টেন্ডার জমা দিতে গেলে পড়তে তোপের মুখে। হতে হয় হামলার শিকার। তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো কোনো ক্ষমতা আর থাকে না দলীয় শক্তির কাছে। বাধা ও হুমকিতে আতংকের মুখে সাধারণ ঠিকাদার কেউ টেন্ডার ঢালতে পারে না রক্ষিত বাক্সে।

এভাবে রাঙামাটির টেন্ডারগুলো একচ্ছত্র বাগাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলীয় সিন্ডিকেটটি। বরাবরই নিয়ন্ত্রণে রাখছে সাজানো, পাতানো টেন্ডারগুলো। ফলে অসহায় ও বঞ্চিত থাকছে সাধারণ ঠিকাদার মহল। গুটিকয়েক ঠিকাদার উচ্চদরে কিনে নিয়ে কাজ করলেও তাতে তেমন কোনো লাভ থাকে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট অনেকে।

এদিকে রাঙামাটিতে ক্ষমতাসীন দলীয় ঠিকাদার চক্রের নিয়ন্ত্রণহীন টেন্ডারবাজি সাধারণ ঠিকাদারসহ বিভিন্ন মহলকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। টেন্ডারবাজদের কাছে জিম্মি সংশ্লিষ্ট টেন্ডার আহবানকারী কর্তৃপক্ষগুলো। বাইরের শক্তির প্রভাবে ঢালাওভাবে ঠিকাদাররা টেন্ডার ক্রয় বা জমা দিতে না পারলেও কিছুই করার থাকে না অফিসের। টেন্ডারবাজি নিয়ে শহরে প্রায় সময় ঘটছে সহিংস ঘটনা।

গত মে মাসে পিডিবির ৫ গ্রুপ কাজের এবং ৭ গ্রুপ টেন্ডার জমা নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতেও কয়েক দফায় উত্তেজনা ঘটে। কিন্তু এরপরও থেমে নেই রাঙামাটিতে বেপরোয়া টেন্ডারবাজি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-১) অতিক্রম চাকমার আহবান করা দুই গ্রুপ কাজের দরপত্রগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। কাজ দুটি হল- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প, বিউবো, রাঙামাটির অধীন বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার লামা এবং রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার কাউখালী এলাকায় ৩৩/১১ কেভি গ্রামীণ টাইপ উপকেন্দ্র স্থাপন।

প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-১) অতিক্রম চাকমা জানান, এ দুটি কাজে সিডিউল বিক্রি হয়েছে ১৪টি। জমা পড়েছে নয়টি। টেন্ডার জমা নিয়ে অফিসের ভেতরে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হয়নি। টেন্ডারবাক্স সময়মতো খোলা হয়েছে।

বুধবার অনুষ্ঠিত হয় একই প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-২) সুমন্ত কুমার মজুমদার আহবান করা নয় গ্রুপ কাজের দরপত্রগ্রহণ। ক্ষমতাসীন দলীয় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের মধ্যে এসব টেন্ডারের সবগুলো কাজ বাগিয়ে ভাগাভাগি করা হয়েছে ।

Exit mobile version