parbattanews

রাঙামাটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান

12556

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে আবারো মিলল গ্যাসের সন্ধান। এবার পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন সাপছড়ি ইউনিয়নের দুই নং ওয়ার্ডের যৌথ খামার এলাকার জনৈক টিটিশন চাকমার বসতভিটার সামনেই আবিস্কৃত হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান। স্থানীয় ৪৫ টি পাহাড়ি পরিবারের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহে রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে প্রদত্ত টিউবওয়েল স্থাপনকালে মাটির নীচ থেকে গ্যাস উঠতে দেখে স্থানীয়রা।

সরেজমিনে উক্ত স্থানে গেলে স্থানীয়রা জানায়, গত পাঁচদিন ধরেই টিউবওয়েল এর পানির সাথে অনবরত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। স্থানীয় পাহাড়ি অধিবাসিরা উক্ত স্থানে প্লাষ্টিকের পাইপ ঢুকিয়ে বসতবাড়িসহ চায়ের দোকানের রান্নার কাজে ব্যবহার করছে প্রাকৃতিক এই গ্যাস।

স্থানীয়রা জানান, ঐ গ্রামের মানুষের খাবার পানির সঙ্কট নিরসনের জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ চলছিলো। টিউব ওয়েলের পাইপ কয়েকশ’ ফিট গভীরে যাওয়ার পর গ্যাস জাতীয় পদার্থ বের হয়ে আসলে তাতে আগুন দেয়ার সাথে সাথে জ্বলে উঠে। স্থাপিত টিউবওয়েল দিয়ে লবনাক্ত পানি বের হচ্ছে যা আগুনে শুকালে লবন জাতীয় গুরি তৈরী হয় বলে জানান এলাকাবাসী। এদিকে এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।

সাপছড়ি ৩নং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার রিটন বড়ুয়া জানান, এলাকার বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ওই এলাকায় জেলা পরিষদের মাধ্যমে পানি সমস্যা নিরসনে একটি ডিপটিউওয়েল বসানোর কাজ চলছে। িিটউবওয়েল কাজ শেষ পর্যায়ে এসে পাইপ জোড়া লাগার সময় দিয়াশলাই জ্বালালে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। তখনি ব্যাপারটি সবার নজরে আসে। এ বিষয়টি আমি রাঙামাটি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করি।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। তবে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি ঘটনাস্থলে এসে পরিক্ষার করে দেখুক গ্যাস নাকি অন্যকিছু। তিনি আর আরও জানান, বর্তমানে এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

গ্যাস উত্তোলিত হওয়া স্থানটির মালিক টিটিশন চাকমা জানান, আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। মঙ্গলবার থেকে এ টিউওয়েল দিয়ে পানি উঠার সময় দিয়াসলাইলের আগুন দিলে জ্বলতে থাকে। বর্তমানে এ টিউওয়েলের পানি এত লবণাক্ত যা খাওয়ার অযোগ্য। স্থানীয় দোকানদার রূপায়ন চাকমা জানান, আমি বর্তমানে এ ডিপটিউওয়েল দিয়ে উঠা গ্যাস দিয়ে দু’দিন যাবৎ দোকানের যাবতীয় রান্না করছি। এখন রান্নার জন্য কাঠের প্রয়োজন হচ্ছে না।

এলাকাবাসী শশি চাকমা জানান, টিউবওয়েলের পাইপ বোরিং করার সময় কয়েকশ ফিট নিচে যাওয়ার পর প্রথমে নিজে নিজে পানি বের হতে থাকে। পানির চাপ বাড়ার সাথে সাথে ঐ পাইপ দিয়ে গ্যাস জাতীয় বাতাস বের হতে থাকে। এ সময় পাইপ জোড়া দেওয়ার জন্য আগুন ধরালে তাতে আগুন ধরে যায়।

ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনকারী মিস্ত্রী সারোয়ার জানান, জেলা পরিষদ থেকে দেওয়া এ ডিপ টিউবওয়েলটি বরাদ্দ দেওয়া হলেও ভূ-পৃষ্ট থেকে অন্তত ৬শ ফুট নিচে অবস্থিত প্রাকৃতিক পাথর মিশ্রিত হওয়ায় টিউওয়লটি স্থাপনে আট মাস সময় লেগে যায়। উক্ত সময়ের মদ্রে আমার ৪৬০ ফুট বেরিং করার পর ফিল্টার ড্রপ করার সময় কয়েকটি নিপিল আগুন দিয়ে জোড়া লাগার সময় আকষ্মিৎ ভাবে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। বিষয়টি সকলের সন্দেহ হলে সেখানে আলাদা একটি পাইপ ঢুকিয়ে দিরে মাটির নিচ থেকে গ্যাস উঠতে থাকে। উক্ত গ্যাস দিয়ে এলাকাবাসী রান্নার কাজ করছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার খবর শোনা গেছে। আমারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এ ব্যাপারে পেট্রো বাংলা এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়কে জানানো হবে। তিনি বলেন, আপাতত মনে হচ্ছে এটি পকেট গ্যাস। তবে তা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ে তেল-গ্যাসের খবর মিলে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৪ সালের গোড়ার দিকে। তখন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়ির এক গহীন জঙ্গলে সেমুতাং নামক স্থানে নির্গত হয়েছিল গ্যাস।

এলাকাবাসীর তথ্যের ভিত্তিতে সাময়িকভাবে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করা হয়। তৎকালীন পাহাড়ী সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক বিদেশী বিশেষজ্ঞ অপহরণের কারণে কোম্পানিটি সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডের কাজ বন্ধ রাখে এবং এক পর্যায়ে কাজ গুটিয়ে চলে যায়। জানা যায়, পরে তারা সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডের সীমানার অপর পাড়ের ভারতীয় অংশে গ্যাস উত্তোলন করে।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি সম্পাদন হবার পর একটি বৃটিশ তেল-গ্যাস কোম্পানি ২নং ব্লকে কার্যক্রম আরম্ভ করে। কিন্তু সম্ভাবনা দেখাতে পারেনি। প্রভূত সম্ভাবনাময় সেমুতাং থেকে ২০১০ সাল থেকে পূনারায় বর্তমান সরকার গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম আরম্ভ করে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে খাগড়াছড়ির বাবুছাড়া, বিজিতলা, রাঙামাটির উত্থানছড়াসহ আরো ক’টি স্থানে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অভিজ্ঞ ও সচেতন পার্বত্যবাসী পার্বত্য চট্টগ্রামে আরো খনিজ সম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের আন্তরিকতার উপর জোর দিয়েছেন।

এখানকার বনজ, পশু সম্পদ ও পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপশি তেল-গ্যাসের সম্ভাবনাকে পরিকল্পিত উপায়ে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আলোকিত পাহাড় বিনির্মাণ সম্ভব হবে। পার্বত্যাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নয়া দিগন্ত সূচিত হবে বলে আশাবাদি পাহাড়ের মানুষ।

– সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর

Exit mobile version