parbattanews

সাজেকে ডায়রিয়া আক্রান্তে ৭ জনের মৃত্যু আক্রান্ত ৩০: ঘটনাস্থলে কাজ করছে সেনাবহিনীর ৫টি মেডিকেল টিম

ফলোআপ

স্টাফ রিপোর্টার:
রাঙামাটি জেলার দুর্গম উপজেলার বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে লবণছড়া কার্বারীর পুত্র ও সন্তান রযেছে। আক্রান্ত রয়েছে আরও ৩০জন গ্রামবাসী। বুধবার বিকাল থেকে বৃহষ্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদহ, চাইল্যাতলী ও লবণছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। রোগ বিস্তার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়ার সাথে সাথে খাগড়াছড়ি থেকে সেনাবাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে হেলিকপ্টার যোগে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম প্রেরণ করে। সঙ্গে খাবার স্যালাাইন, জরুরী ঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রেরণ করা হয়। এরই মধ্যে রাঙামাটি, বাঘাইছড়ি, বাঘাইহাট, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের ৫টি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে চিকিৎিসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। বিজিবি’র শিয়ালদহ বিওপি ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সহায়তায় একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করেছে যেখানে ১৪০ জন ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছে। সেনবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঘটনাস্থলে একটি অস্থায়ী হসপিটাল স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ১০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা নিয়েছে।

তাছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দুটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। গতকালের পর আর কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের জি টু মেজর রোবাইয়াত ফেরদৌস। মৃতের সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ জনের মৃত্যুর খবর আমার নিশ্চিত হয়েছি। তবে এলাকাটি খুবই দুর্গম পায়ে হেঁটে ছাড়া এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া যোগাযোগ করা কঠিন। এর বাইরেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা আছে কিনা আমরা খোঁজ নিচ্ছি। খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের কমাণ্ডার ব্রি. জে. স. ম. মাহবুবুল ইসলাম ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন জানান, এ ঘটনাটির খবর পেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’টি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত রোগের তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এলাকাটি দূর্গম হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে কি না সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কি কারণে হঠাৎ করে এতোগুলো মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে, সে ব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও তীব্র গরম ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ । মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর এই পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা জানান, বুধবার বিকাল থেকে বৃহষ্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদহ, চাইল্যাতলী ও লবণপাড়া গ্রামে হঠাৎ পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া নারী-পুরুষ ও শিশুসহ আরও ৩০জনের মত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে কি কারণে হঠাৎ করে তিনটি গ্রামের এতোগুলো মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেছে সে ব্যাপারে সেঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে। তীব্র গরম আর বিশুদ্ধ পানির কারণে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে এসব গ্রামে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম।

তবে এ আগে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার বিকাল থেকে বৃহষ্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭ জন মারা গেছে। তাদের নাম, ভাতরাই ত্রিপুরা (৩৫), বদরাত্রী ত্রিপুরা (৪৫), ভীরবাবু ত্রিপুরা (৫০), লক্ষী ত্রিপুরা (৩০) ও দির্বরা ত্রিপুরা (২৮), বিদ্যামোহন ত্রিপুরা (৮৫) কুসুমতি ত্রিপুরা (৫২)। তবে রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জনের দায়িত্বে থাকা ডাঃ সুশোভন দেওয়ান পাঁচজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে এই ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ সুশোভন দেওয়ান জানান, রাঙামাটির দূর্গম অঞ্চল বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদাহ, চাইল্যাতলী ও লবন পাড়া গ্রামে নারীসহ ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। খবর পেয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে দুটি মেডিকেল টিম ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় রওনা দিয়েছেন। দুর্গমতার কারণে মেডিকের টিমের পৌছাতে দেরী হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আক্রান্ত এলাকায় খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়ছে। গ্রামগুলো ত্রিপুরা অধ্যুষিত এবং অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। পায়ে হেটে গ্রামে যাওয়া ছাড়া যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম নেই। এলাকার ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে তিনি জানান।

Exit mobile version