রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে হাহাকার

fec-image

দিনদিন করোনায় অসহায় হয়ে পড়ছে পুরো পৃথিবী। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে ততই লাশের মিছিলের সংখ্যা বাড়ছে। স্বজন হারানোর বেদনায় আকাশ-বাতাস ভারী হচ্ছে। বদলে গেলে মানুষের জীবন-যাপন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

মৃত্যুর ভয়ে দুশ্চিন্তায় কাটছে প্রহর। ধ্বস নেমেছে অর্থনীতির চাকায়। এই ভাইরাসের প্রকৌপ থেকে বাঁচতে পারিনি রূপ-লাবণ্যর শহর খ্যাত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি।

দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটির ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করছে। বলা যায় হাত গুটিয়ে বসে আছে ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাথায় বাজ পড়েছে।

প্রতি বছর পর্যটক মৌসুমে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে হ্রদ-পাহাড়ের এই শহর। কিন্তু করোনার কারণে পর্যটক আগমনের ভরা মৌসুমে পর্যটক না আসায় জেলার পর্যটন স্পটগুলো হাহাকার করছে। পুরো এলাকায় ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে আছে স্পটগুলো।

রাঙামাটির সিম্বল অব খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি এখন একা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। ট্যুরিস্টবোটগুলো হ্রদের পড়ে ভেসে আছে। বোটে মেশিনগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। তাই পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বেকার সময় পার করছে, গুণছে লাখ লাখ টাকার লোকসান।

একদিকে তাদের ব্যাংক ঋণের বোঝা অন্যদিকে ব্যবসা বন্ধ! সব মিলে নিদারূণ সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে তারা।

রাঙামাটি বোট মালিক সমিতির সভাপতি রমজান আলী বলেন, করোনার কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাঙামাটিতের পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। প্রায় সাড়ে চারমাসের বন্ধ থাকায় আমরা যেমন বোট মালিকরা কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে তেমনি বোটের শ্রমিকরা তীব্র কষ্টে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বোট মালিকদের মধ্যে অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বোট ক্রয় করে পর্যটন ব্যবসায় নেমেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন দুর্দশা নেমে আসবে তারাও এমনটি ভাবেননি। ঋণের বোঝায় তারা এখন জর্জরিত। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় তাদের মাথায় বাজ পড়েছে।

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, রাঙমাটিতে সারা বছর পর্যটকদের আগমন ঘটে। বর্ষা মৌসুমেও পর্যটকদের আনাগোনাটা আরো বেশি ভাড়ে। করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের বিধি-নিষেধ থাকায় এই বছর ঈদুল ফিতরেও পর্যটকদের আগমন ঘটেনি। যে পরিস্থিতি শুরু হয়েছে এইবার ঈদুল আযহায়ও পর্যটক আসবে না। আমরা এখন পুরো ধ্বংসের পথে।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন এর ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে সারা বছর পর্যটক থাকে। এছাড়াও পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহাসহ নানা দিবসে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু করোনার কারণে আমরা প্রায় সাড়ে চারমাসের মতো ব্যবসা করতে পারিনি।

ম্যানেজার সৃজন বলেন, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে মাস প্রতি ৩৫লাখ টাকা আয় করি, জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে কিছুটা বেড়ে মাস প্রতি ৪৫লাখ টাকা এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত মাস প্রতি ৫৫লাখ টাকার ব্যবসা করি।

এই বছর আর ব্যবসা হবে না। কারণ করোনার ক্রান্তিকালের দিন আরো বেড়ে যাচ্ছে। এই বছর সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।

তিনি জানান, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয় তাহলে পর্যটন করপোরেশন ক্ষতি পুষিয়ে উঠার চেষ্টা চালাবে। চেষ্টা চলবে সরকারের আয়ের পরিধি বাড়াতে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনা, পর্যটন, রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন