parbattanews

রাঙামাটির সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ মিলন মেলা

Rangamati BGB_BSF shimanto pic01ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি:

রাঙামাটির প্রত্যন্ত দুর্গম সীমান্ত ছোট হরিণার থেগামুখ অঞ্চলে গেলেই দেখা মিলে ভারত-বাংলাদেশের মিলন মেলা। সেখানকার পাগল করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেকোন মানুষকেই বিমোহিত করবে। কর্ণফুলী নদীর একপাশে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জেলে আরেকপাশে ভারতীয় পতাকাবাহী জেলেরা মাছ ধরছে একসঙ্গে। যেন একই সুতোয় বাঁধা জীবন ঘুরপাক খাচ্ছে নদীর নীল জলে। দু’দেশের বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর স্বচ্ছ জলের প্রবাহ আর নয়নাভিরাম পাহাড়ি গ্রামের সৌন্দর্য্য যেন বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এই এলাকার অর্থনৈতিক এবং পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বদলে যাবে এখানকার জনজীবন। এরফলে দেশের অর্থনীতিতেও বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। আর সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখনই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

জানা গেছে, রাঙামাটি শহর থেকে ৬ ঘণ্টার নৌ দূরত্বে অবস্থিত বরকল উপজেলার ছোট হরিণা বাজার। সেখান থেকেও অন্তত দুই ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় বড়হরিণা, তবলাবাগ, থেগামুখ অঞ্চল। এখানে অন্তত ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় পায়ে হেঁটেই সীমান্ত পাহারা দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ্ ২৫ ব্যাটালিয়নের জওয়ান। ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী ওই এলাকাটিতে বিজিবি ছাড়া অন্য কোন বাহিনীর উপস্থিতি নেই। সেখানে জীবন যেন বড় কঠিন। নেই প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি, টেলিফোন নেটওয়ার্ক, বিদুৎ, পর্যাপ্ত নৌযান, যোগাযোগের বিকল্প কোন মাধ্যম।

                                                                                  

রাঙামাটির ছোট হরিণার ২৫ব্যাটালিয়নের কর্মরত বিজিবির কর্মকর্তারা জানান, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানে বড়ধরনের বর্ডার ক্রাইম হয় না। নেই বড় ধরনের চোরাচালানের ঘটনাও। যেহেতু সীমান্তের উভয় পাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী সবাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাই তাদের ভাষা কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি প্রায় এক ও অভিন্ন। সীমান্তবর্তী উভয় পাড়ের মানুষের হৃদয়ের বন্ধনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বিজিবির-বিএসএফ উভয়েরই। তাই তারা সীমান্ত পাহারায় কখনও কখনও যান্ত্রিকতার চেয়ে হৃদয়বৃত্তিকেই প্রাধান্য দেন। এখানে বিজিবি-বিএসএফ সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পতাকা বৈঠকও হয়।

থেগামুখ স্থানীয় এলাকাবাসী সাধন মণি চাকমা জানায়, এ অঞ্চলে এমন অনেকে আছে যাদের শ্বশুর বাড়ি সীমান্তের ওই পারে। শ্বশুড় বাড়ি যেতে কখনও খুব একটা সমস্যা হয় না তাদের। তাছাড়া দেশের অন্য এলাকায় সীমান্তে কোন সমস্যা হলে এখানেও বিজিবি-বিএসএফ কিছুটা সর্তক হয়- ফলে তখনই মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। তবে ওই এলাকায় সীমান্তে কোন সমস্যা তারা দেখে নি।

থেগামুখ বাজারের এক ব্যবসায়ী মন মহোন দেওয়ান সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ওই সীমান্ত দিয়ে সাধারণত দৈনন্দিন সামগ্রী, সাবান, চা পাতা, দুধ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট ও চিপস বাংলাদেশে আসে। এসব জিনিসের প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের আগ্রহ বেশি। তবে কোন ধরনের বাণিজ্য্যিক উদ্যোগ না থাকায় এসব পণ্য জ্ঞাতসারেই এবং প্রকাশ্যে অবৈধ পণ্য হিসেবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ট্রানজিট পয়েন্ট হলে এসব পণ্যে চোরাচালান হবে না। ওই সীমান্ত অঞ্চলের একটি ট্রানজিট খুলে দিতে পারে দুর্গম পার্বত্য এলাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার।

Exit mobile version