রাঙামাটি আদালত ভবণ নির্মাণে শুভঙ্করের ফাঁকি
রাঙামাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন (সিজেএম) নির্মাণে শুভঙ্করের ফাঁকি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুত্রমতে, ভবন নির্মাণের ঠিকাদার তার কর্ম সম্পাদন চুক্তি বা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছেন তার কাজ। তদারকি প্রতিষ্ঠানের (গণপূর্ত) সাথে মোটা টাকার লেনদেনের মাধ্যমে ঠিকাদার তার এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই কাজে বড় ধরণের গাফলতি, অনিয়ম এবং কাজের গতি দেখে নড়েচড়ে বসেছে খোদ গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম জোন। তারা প্রাথমিক ব্যবস্থাও নিয়েছেন তাদের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। শেষ খবর পর্যন্ত তাদের শো’কজ করা হয়েছে।
শো’কজ প্রাপ্ত প্রকৌশলীরা হলেন-রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহ ও একই বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জহির রায়হান। একই সাথে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনর্সোটিয়ামকেও শো’কজ করা হয়েছে।
শো’কজ প্রাপ্তদের মধ্যে প্রকৌশলী জহির রায়হানকে নিজ কর্মস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ্ উদ্দিন আহাম্মদ স্বাক্ষরিত শো’কজ পত্র থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম জোনের সংশ্লিষ্টরা জানায়, রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিজেএম) ভবন নির্মাণে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম জোন তড়িৎ ব্যবস্থা হিসেবে রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের দু’জন প্রকৌশলীকে শো’কজ করেছে। এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকেও শো’কজ করা হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, সম্প্রতি গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রামের জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ্ উদ্দিন আহাম্মদ রাঙামাটি সদরে নির্মাণাধীন সিজেএম ভবন পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে গিয়ে তিনি পাঁচটি ভয়াবহ অনিয়ম খুঁজে পান। পরিদর্শন শেষে কাজের অগ্রগতি দুর্বল পেয়ে তিনি চট্টগ্রামে ফিরে এসে তাৎক্ষণিকভাবে দুই প্রকৌশলীকে শো’কজ করেন। বিষয়টি গুরুতর হওয়ায় গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করেন ।
আদালত ভবন নির্মাণের পাঁচটি গুরুতর অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- অতি পুরাতন সাঁটার দ্বারা ঢালাই কার্যক্রম সম্পাদন করা, ভবনটির উত্তর দিকে ক্রটিপূর্ণ সাটারের কারণে ঢালাই কংক্রিট বেরিয়ে পড়ে কলামের আকৃতি ত্রুটিপূর্ণ করা, ঢালাই কাজে প্রচুর হানিকম্ব সৃষ্টি হয়েছে, যা পরে আস্তর দ্বারা বন্ধ করা হয়েছে। সাইটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল।
এদিকে শোকজপ্রাপ্ত রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহও শো’কজের জবাব দিয়েছেন। ঠিকাদারের গাফিলতি ও কাজের নিম্নমান নিয়ে এবার তিনি নিজে একটি অভিযোগ পত্র প্রদান করেছেন চট্টগ্রামের জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত বিভাগের একাধিক প্রকৌশলী জানান, রাঙামাটিতে সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণে কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মোটা অংকে টাকা মেরে দেয়ার জন্য কোন রকমে একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যেসব সাঁটার দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে তা যেকোন মুহুর্তেই ধসে পড়তে পারে। এছাড়া ভবনে যেভাবে একবার নির্মাণ করে আবার ভেঙ্গে ফেলে আবার নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে ভবনের মারাত্মক ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ তোয়াক্কা না করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি তাদের মন গড়া রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে।
ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনর্সোটিয়াম লিমিটেড এর স্বত্তাধীকারী মোহাম্মদ মমিনের সাথে একাধিকবার এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কোন তথ্য না দিয়ে তিনি কালক্ষেপন করতে থাকেন।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহ বলেন, আমরা যে সকল অভিযোগ পেয়েছি তার সমাধান করা হয়েছে। উর্দ্ধতন মহলকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। ঠিকাদারকে কাজের মান ঠিক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রকৌশলী আরও বলেন, সিজিএম আদালত ভবনটি নির্মাণ শেষ হবে চলতি বছরের মধ্যে। বর্তমানে দ্বিতল ভবনের কাজ চলছে। কাজের মেয়াদকাল, ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিল ছাড়ের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা (প্রকল্প কর্মকর্তা) এ বিষয়ে জানেন বলে যোগ করেন তিনি।
প্রকৌশলী আরো জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান যে মানের কাজ করে তা অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান সে মানের কাজ বজায় রাখতে পারে না।