parbattanews

নানা অব্যবস্থাপনায় চলছে রাঙামাটি চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন

রাঙামাটি জু

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি:

নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে রাঙামাটির একমাত্র মিনি চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। ২০১০ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকার পাশে দশ একর জায়গার উপর নির্ম্মন করা হয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মিনি চিড়িয়াখানা।

 

চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য বাড়াতে আর পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়তে পাহাড়ি এলাকায় খাঁচাবন্দি করা হয়- ভল্লুক, হরিণ, অজগর, ময়ূর, বানর, সজারুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। প্রথম কয়ক বছর খুব জমজমাট থাকলেও আস্তে আস্তে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গাার্ডেন পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়ে। কারণ চিড়িয়াখানার উদ্বোধনের পর কয়েক বছর যেসব পশুপাখি ও জীব বৈচিত্র্য দেখে পর্যটকরা আনন্দ পেত, এখন সেগুলো শুধুই কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

অভিযোগ উঠেছে, রাঙামাটির একমাত্র মিনি চিড়িয়াখানাটি রক্ষা করতে জেলা পরিষদ প্রতিমাসে অর্থ ব্যয় করলেও তা কোন কাজেই আসছেনা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চিড়িয়াখানার প্রায় সব প্রাণী। মাত্র চারজন কর্মচারীর পরিচালনায় কোন রকম টিকে আছে এই চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। কর্মচারীদের পরিচালনায় কেমন আছে চিড়িয়াখার পশু-পাখিগুলো দেখার কেউ নেই।

চিড়িয়াখানার এক কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনচ্ছুক) অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ বাড়ি বানিয়ে রেখেছে সুন্দর সুন্দর করে। রাস্তাও করা হয়েছে। কিন্তু চিড়িয়াখানায় প্রাণী তো নাই। মাত্র কয়েকটি প্রাণী আছে। সেই জন্ম থেকে। পর্যটকরা একটা প্রাণী কয়বার দেখবে। একবার দেখলে সাধ মিটে যায়। আর দেখার কোন শখ থাকে না। তাই এখন কোন পর্যটক চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসে না।

সরজমিনে দেখা গেছে, রাঙামাটির একমাত্র মিনি চিড়িয়াখানায় বর্তমানে রয়েছে কয়েকটি বানর, একটি ভালুক, হরিণ, মযূর ও বনবিড়ালসহ খরগোশ। তাছাড়া বেশিরভাগ খাঁচা খালি পড়ে আছে। অযত্নে অবহেলায় কোন রকম বেঁচে আছে মাত্র কয়েকটি প্রাণী। এমন বেহাল দশার চিড়িয়াখানার সম্পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন আকারের খাঁচা পড়ে আছে প্রাণীহীন। বর্তমানে যেসব খাঁচায় পশু রয়েছে সেগুলো স্থাপনের পর কোনোদিন পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। নোংরা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থেকে গায়ের রংও হারিয়ে ফেলেছে হরিণসহ অন্য প্রাণীগুলো। বানরের খাঁচা দেখে হঠাৎ কেউ ডাস্টবিন ভাবাও বিচিত্র নয়। আর এসব প্রাণীকে নিয়মিতভাবে খাবার দেওয়ার কোনো নমুনাও দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, মিনি চিড়িয়াখানার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের নাম। নামেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। আসলে বাগান জুড়ে ময়লা ও আবর্জনার ছাড়া আর কিছুই নেই। নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা। ভাঙা দোলনা আর বখাটে ছেলেদের আড্ডা ছাড়া দেখার কিছুই নেই। বিকেল হলেই উৎপাত বেড়ে যায় বিভিন্ন বয়সের বখাটে ছেলেদের। নজরদারি না থাকায় বাগানের বিভিন্ন স্থানে বখাটে ছেলেদের জমে মদ, গাঁজা ও জুয়ার আসর।

তবে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে না চাইলেও রাঙামাটি জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. এরশাদুল হক মন্ডল জানায়, বরাদ্দ কম থাকায় এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলে সমস্যা কেটে যাবে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন বলেন, সমস্যা থাকলে সমাধানও করা হবে। একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে তা সব সময় পর্যবেক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে আমি এসব সমস্যা ক্ষতিয়ে দেখব। সব সমস্যা কাটিয়ে চিড়িয়াখানার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া ব্যাপস্থা করা হবে।

Exit mobile version