parbattanews

রাঙামাটি জেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি: শাহ আলম সভাপতি, দীপন তালুকদার সাধারণ সম্পাদক ও সাইফুল সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত

দতগহজকব

রাঙামাটি প্রতিনিধি :

পরিবর্তন হলো রাঙামাটি জেলা বিএনপির। কাউন্সিলে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন হলো নেতৃত্বের।  নির্বাচিতরা হলেন, সভাপতি পদে শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক দীপন তালুকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদকএ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির ।

আজ ৮ অক্টোবর রাঙামাটি জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী এ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে।

তবে জেলা বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি দীপেন দেওয়ানের নেতৃত্বে একটি অংশ নির্বাচনের আগেই অনিয়মের অভিযোগ এসে কাউন্সিল বর্জন করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে এগারোটায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দলীয় কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার।

দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক ম্যামা চিং মারমা, নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম চৌধুরী ও নির্বাহীর কমিটির সদস্য মাহবুবের রহমান শামীম। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছেন রাঙামাটি জেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট দীপেন দেওয়ান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেছেন, ‘অনেকেই বলেন, বিএনপি ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু বিএনপি ঘুমিয়ে নেই। দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বিএনপি সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত করে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করবে।’

তিনি আরো বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএনপির পুনর্গঠন কাজে হাত দিয়েছেন, তারই নবযাত্রা শুরু হচ্ছে রাঙামাটি থেকে উল্লেখ করে দলটির যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘আজকের এই সম্মেলন শুধু রাঙামাটির জন্য নয়, সারা দেশের জন্য একটি প্রতীকী প্রতিবাদ।’

৮ অক্টোবর সকালে রাঙামাটি জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মোঃ আবু নাছির । এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রবীন্দ্র লাল চাকমা, তফাজ্জল হোসেন, রবি দে, সুজিত দেওয়ান উপস্থিত ছিলেন।

বিকালের দিকে দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা কমিটির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতি প্রার্থী শাহ আলমের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের সাথে আঁতাত করে ভোট কেনার অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করেছেন অপর সভাপতি প্রার্থী দীপেন দেওয়ান। এসময় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী সেলিম বাহারীও একই অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করেন।

পরে দীপেন দেওয়ান তার পক্ষের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল সহকারে শহরের কলেজ গেইট এলাকায় যান। সেখানে তিনি শাহ আলমকে রাঙামাটিতে অবাঞ্চিত ঘোষণা ও দলীয় ব্যবস্থা নিতে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে দাবী জানান।

এর আগে মনোনয়পত্র প্রত্যহারের তারিখ ৬ অক্টোবর হলেও ৫ অক্টোবর অপর সভাপতি প্রার্থী পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্রো শাহ আলমকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

এদিকে নির্বাচন বর্জন করে সভাপতি পদে প্রার্থী বর্তমান সভাপতি দীপেন দেওয়ান সাংবাদিকদের বলেন,  তিনি আওয়ামীলীগের এজেন্ট হিসাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন। গতকাল রাতে টাকা দিয়ে তারা ভোট কিনে নিয়েছে। তাই আমি নির্বাচন বর্জন করে শাহ আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

নির্বাচিত সভাপতি শাহ আলম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, দীপেন দেওয়ানের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন। কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের কোন প্রশ্ন আসে না। নির্বাচিত সভাপতিকে দীপেন দেওয়ান কর্তৃক তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

জেলা বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আবু নাছির জানান, আমরা সকল প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে নির্বাচন দিয়েছি, কেউ নির্বাচন মেনে নিয়ে নির্বাচন অংশ নিয়ে যদি চলে যায় তাতে কিছু বলার থাকে না। আমাদের অধিকাংশ কাউন্সিলর ও ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলানায়তনে দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। সন্ধ্যায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আবু নাছির ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে দেখা যায়, মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্রো প্যানেলের সভাপতি পদে শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক পদে দীপন তালুকদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পনির বিজয় লাভ করেন।

প্রাপ্ত ফলাফলে সভাপতি পদে শাহ আলম ১০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী দীপেন দেওয়ান পেয়েছেন ৩০ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে দীপন তালুকদার ৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মামুনুর রশীদ মামুন পেয়েছেন ৫৫ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সর্বোচ্চ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন এডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির তার প্রাপ্ত ভোট ১৩০, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম বাহারি পেয়েছেন মাত্র ৬ ভোট। নির্বাচনে ১৬৭ জনের মধ্যে ১৩৬জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

Exit mobile version