parbattanews

রাঙামাটি রাজবন বিহারে ২দিনব্যাপী ৪২তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু

Rangamati Kothin pic01

ফাতেমা জান্নাত মুমু :

বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে রাজবন বিহার এলাকাসহ রাঙামাটি শহর। ঢল নামছে অগণিত পুণ্যার্থীর। এবার দানোৎসবে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ২৫ উপজেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যোগ দিতে এসেছে অগণিত পুণ্যার্থী। কানায় কানায় ভরে গেছে রাঙামাটি রাজবন বিহার এলাকা। চারদিক পাহাড়ি-বাঙালীর মিলিন মেলায় পরিণত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। বেলা আড়াইটায় বেইন ঘর পরিদর্শন শেষে সূত্রপাঠ করে করেন মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্যমন্ডলী। বিকাল তিনটায় ফিতা কেটে বেইনঘর উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। পরে চরকায় সুতাকাটা বেইন বুনন উদ্বোধন করেন রানী ইয়েন ইয়েন রাখাইন।

মহামতি গৌতম বুদ্ধের মহাপুণ্যবতী উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাজবন বিহারে আয়োজিত ৪২তম কঠিন চীবর দানোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ছাড়াও উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান, রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিকিল কুমার চাকমা, দেওয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম নীতি অনুসরণ করে একে অপরের প্রতি মৈত্রীভাব আচরণ করা মানবের ধর্ম। এতে জন্ম-জন্মান্তরে সুখ ও শান্তি লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা সব সময় সৎ পথে চলে। প্রাণি হত্যা, ব্যাভিচার, মাদক সেবন, মিথ্যাচার, কাম লোভ ও হিংসা পরিহার করে চলতে পারলে ইহকাল পরকাল পরম শান্তি লাভ করা যায়। তিনি পার্বত্যাঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান চীবর দানোৎসবের মধ্যে দিয়ে সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি ঐক্য গড়ে তুলার আহবান জানান।

এবার চীবর দানোৎসবে ১৬৫টি বেইন (পাহাড়িদের কোমর তাঁত) বসানো হয়েছে। রাতব্যাপী চলে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বেইন বুনন । তাছাড়া উৎসবে ফানুস উড়ানো, হাজার পাতি প্রজ্জালন ও ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুষ্ঠান।

এব্যাপারে রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ জানান, অনুষ্ঠিত রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে। রাঙামাটি রাজবন বিহারে এ মহাদানযজ্ঞ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে।

তারও আগে ১৯৭৪ সালে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ শ্রাবক বুদ্ধ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের এক স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ পার্বত্য তিন জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।

Exit mobile version