রাঙ্গামাটিতে গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় চলে বিদ্যালয়, দরকার সরকারের সহযোগিতা

fec-image

বিদ্যালয়ে আসে না কোনো সরকারি সাহায্য। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পড়ছে বিনা বেতনে। শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে।

রাঙ্গামাটি বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী ঠেগা আন্দারমানিক এলাকায় এমন একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করল গ্রামবাসী। এর নাম দেয়া হলো ঠেগা আন্দারমানিক নিম্ন মাধ্যামিক বিদ্যালয়।

দুর্গম পাহাড়ি এলাকার আশে পাশে কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় এবং কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে ১৯৯৬ সালে গ্রামবাসীর চাঁদার অর্থে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের গ্রামবাসীর সমন্বয়ে চাঁদা তুলে কোনো রকম এই বিদ্যালয় চলে। তবুুুও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটাতে হিমশিমে পড়তে হয় পরিচালনা কমিটিকে।

বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন, শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন এবং একজন অফিস সহকারিও রয়েছেন।

তাঁরা আরও জানান, ১৯৯৬ সালে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে বিদ্যালয়টি নির্মিত হলেও আর্থিক সংকটের কারণে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। তবে আবার গ্রামবাসীর সহযোগিতায় দীর্ঘ ২৩ বছর পর রবিবার (৫ জানুয়ারি)  বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করা হয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যালয়টি কত দিন চালু রাখা যাবে তা নিয়েও সংশয় আছে কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা ও বিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে এলাকার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ থেকে এখনও চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় প্রতি মাসে তাঁদের বেতন-ভাতা মেটানো হচ্ছে। তাই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষারমান বৃদ্ধির জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তাঁরা।

ঠেগা আন্দারমানিক নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ১৭৫ নং করল্যাছড়ি মৌজার হেডম্যান রাজেশ চাকমা (তপন) জানান,  গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে এই বিদ্যালয়টি যদি সরকার এবং জেলা পরিষদ বা উন্নয়ন বোর্ড এর কাছ থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে এই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেয়া যাবে। প্রত্যন্ত এলাকা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকায় স্থানীয়রা তাদের সন্তানদের শিক্ষার মান উন্নয়নে নিজেদের প্রচেষ্টায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বরকল উপজেলা মাধ্যামিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সুলতান আহমেদ জানান, তাদের পক্ষ থেকে বইপত্র দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন। তিনি আরো জানান, এই বিদ্যালয়টি বেশ কয়েক বছর বন্ধ ছিলো। পরে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়টি আবার চালু করা হয় এবং তিনি গ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করার জন্যও পরামর্শ দেন।

দীর্ঘ ২৩ বছর পর ঠেগা আন্দারমানিক নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অবশেষে রবিবার সকালে (৫ জানুয়ারি) বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। এসময় শিক্ষার্থীদের নতুন বইও প্রদান করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, ঠেগা আন্দারমানিক নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রিকেল চাকমা, স্মরনিকা চাকমা, ফুলরাজ চাকমা ও মাউচিং মারমা, পরিচালনা কমিটির বিজয় সিং চাকমা, অলক কুমার চাকমা, সুরতি রঞ্জন চাকমা ও পাত্তরমুনি চাকমাসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন